ক্ষতির পরিমাণ ১৬০০ কোটি টাকা ছাড়াবে, শঙ্কা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের

নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল-বিপিআইসিসি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2020, 03:43 PM
Updated : 31 March 2020, 03:59 PM

সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমান বলছেন, এমন পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। 

বিপিআইসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২০ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ দিনে বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের দরপতন এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারার কারণে এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত দেশের একমাত্র পিআরটিসি ল্যাবটি বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে ছাড়ানো যাচ্ছে না পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল।

বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, “করোনা সতর্কতায় জনসমাগম ঠেকাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার-হাটে ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। এতে চাল-ডালের মত পণ্যের দর ক্ষেত্র বিশেষে বাড়লেও ব্যাপকহারে কমেছে ব্রয়লার মুরগি, একদিন বয়সী বাচ্চা ও ডিমের দাম।”

তিনি জানান, পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের উৎপাদন প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ কমে গেছে। একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম মাত্র এক টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩৫ টাকা। এছাড়া পোল্ট্রি প্রসেসড প্রোডাক্টসের বিক্রি ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

মসিউর বলেন, “আমাদের প্রাথমিক হিসাব মতে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি আরও এক সপ্তাহ এ অবস্থা চলতে থাকে তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫০ কোটি টাকা ছাড়াবে।

“এরপরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দাঁড়াবে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মার্কেট স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও অন্তত এক মাস।”

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল জানান, ব্রিডার্স ও হ্যাচারি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪৫৮ কোটি টাকা।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান জানান, এ শিল্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭৫ কোটি টাকার বেশি।

এছাড়াও বিপিআইসিসির হিসাবে বাণিজ্যিক পোল্ট্রিতে (ডিম, মুরগির মাংস) ৫০৩ কোটি টাকা, প্রসেসড ইন্ডাস্ট্রিতে ৩১ কোটি টাকা এবং প্রাণি ওষুধ খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ৮৩ কোটি টাকা।  

পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষায় বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে নানা সহায়তা।

এসবের মধ্যে রয়েছে- পোল্ট্রি শিল্পের প্রতিটি শাখা যেমন- নিবন্ধিত ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারি, বাণিজ্যিক মুরগির খামার, ফিড মিল, ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারি প্রতিষ্ঠান, কাঁচামাল সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের সুদ আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ; বন্দরে আটকে পড়া কাঁচামালের কারণে যে পোর্ট ডেমারেজ জমা হচ্ছে তা পুরোপুরি মওকুফ; সাধারণ মানুষের জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে ডিম ও মুরগির মাংস বিতরণ; পোল্ট্রির সবগুলো খাতের জন্য ৩০% আর্থিক প্রণোদনা প্রদান; কোভিড-১৯ বিষয়ক সচেতনতার অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের ইতিবাচক প্রচারণা চালানো।