বোয়িং থেকে আরো দুটো উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে আরো দুটি উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2019, 03:20 PM
Updated : 17 Sept 2019, 03:20 PM

মঙ্গলবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের বহরে যুক্ত হওয়া চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংসের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরো তিনখানা ড্যাশ প্লেন আসছে। তবে আমরা একটা খবর পেলাম বোয়িংয়ের আরো দুইখানা প্লেন তারা খুব শিগগিরই বিক্রি করতে চাচ্ছে। কেউ অর্ডার দিয়ে পরে নেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব।”

এর বাইরে আরও দুটো কার্গো উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “পাশাপাশি কার্গো ভিলেজ আমরা তৈরি করে দেব। যাতে করে রপ্তানিটা সহজভাবে আমরা রতে পারি।”

বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০টি নতুন এয়ারক্র্যাফট কিনতে ২০০৮ সালে চুক্তি করে বিমান। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং তিনটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার আগেই বিমানের বহরে যুক্ত হয়েছে।

ওই চুক্তির আওতায় কেনা সর্বশেষ উড়োজাহাজ ‘রাজহংস’ শনিবার ঢাকায় পৌঁছায়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানের বহরে যুক্ত করে নেওয়া হয়।  

রাজহংসকে নিয়ে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬টিতে। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ভাড়া করা। 

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের আস্থা অর্জন করে সেবার মান নিশ্চিত করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি একটা অনুরোধ করব। এত কষ্ট করে, এত অর্থ দিয়ে বিমান কিনে দিয়েছি। অতএব এর রক্ষণাবেক্ষণ, সেটা যেমন আপনাদের আন্তরিকতার সাথে দেখতে হবে, সেই সাথে যাত্রীসেবা… যাত্রী সেবার মান, যাত্রীদের আস্থা বিশ্বাস- সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে নিশ্চিত করতে হবে।

কক্সবাজার, সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল বিমানবন্দরের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বিমানের ফ্লাইট পরিকল্পনা সাজানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “নতুন স্টেশনগুলো নতুনভাবে খোলার চেষ্টা করছি। ইনশাল্লাহ আমরা লন্ডনে আরও দুটো স্লট নিতে পারব। পাশাপাশি বোয়িং তো আমেরিকার প্লেন। আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর এখানে আছেন। বোয়িং যদি আমেরিকা না যায় তাহলে সেটা তো তাদেরই মান সম্মানের ব্যাপার। আমি আশা করি আমরা সেখানেও ভবিষ্যতে যেতে পারব।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

সাবেক বিএনপি সরকারের সময় বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি খুব অবাক হতাম ওই রকম একটা ঝরঝরে অবস্থায় প্লেন কীভাবে আমাদের পাইলটরা চালায়। আমি বলতাম আমাদের পাইলটদের বিশ্বসেরা পাইলট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

“মাঝে মধ্যে আমরা ঠাট্টা করতাম। আমাদের ঢাকা শহরে যে বাসগুলো চলত, যে বাসগুলো খুবই বিধ্বস্ত অবস্থায়… আমরা ডাকতাম মুড়ির টিন বলে। আমাদের বিমানের অবস্থা সেই রকম ছিল।”

বিএনপি আমালে বিমানের দুরবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যখনই বাইরে যেতাম, বিশেষ করে লন্ডনে বা আমেরিকায় যখন যাওয়া হত, আমি প্রায়ই বিমান ব্যবহার করতাম। তখন বিমানের যে ঝরঝরে অবস্থা ছিল… প্লেনে উঠলে আগে পানি পড়ত, কিছু গুঁজে দিয়ে বন্ধ করা হত। এন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। মাঝে মাঝে ককপিটে যেতাম। কথা বলতাম।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

বিরোধীদলে ছিলেন বলে সে সময় কিছু করার ক্ষমতা ছিল না; তবে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে বিমানের অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর একটি আকাঙ্ক্ষা যে তখন থেকেই ছিল, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “সত্যি কথা বললে কি, এখন বিমানে চড়লে গর্বে বুক ভরে যায়। যেন আমরা আমাদের বিমানে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমি নোটিশ জারি করেছি, সরকারি অফিসাররা যে যখন যেখানে যাবেন, যেখানে বিমান যায় বিমানেই যেতে হবে। আমরাও সেভাবে চলতে চেষ্টা করি।”

অন্যদের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, বিমান সচিব মহিবুল হক, বিমানের এমডি মোকাব্বের হোসেন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।