জনসনের বেবি পাউডার পরীক্ষা করবে বিএসটিআই

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সার সৃষ্টির উপাদান পাওয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশেও পরীক্ষার মুখে পড়েছে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2018, 05:01 AM
Updated : 22 Dec 2018, 05:34 AM

বাংলাদেশের বাজারে জনসন অ্যান্ড জনসনের যে বেবি পাউডার বিক্রি হয়, তাতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখবে দেশের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই।

বিএসটিআই পরিচালক এস এম ইসহাক আলী শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই পাউডারে ক্ষতিকারক অ্যাজবেস্টস আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য তারা প্রথমে দেশের পরীক্ষাগারে পাঠাবেন। দেশে সম্ভব না হলে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবেন।

“আমরা বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। রোববার অফিস খোলার পর বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা নেব আমরা।”

তবে অ্যাজবেস্টসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার বিক্রির উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না বলে জানান ইসহাক আলী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক এই কোম্পানির শিশুদের তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, লোশন ও পাউডারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেক বাবা-মা নিরাপদ মনে করেই তাদের সন্তানদের জন্য জনসনের পণ্য কেনেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিকাল কেমেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাউডারের বিভিন্ন খনিজ উপাদানের মধ্যে দূষণ আকারে অ্যাজবেস্টস যুক্ত হয়ে যেতে পারে। এটি কেউ ইচ্ছা করে যোগ করে না। এই এসবেস্টাসকে ক্যান্সারের কারণ হিসাবে দেখা হয়। তবে আমাদের দেশের বাজারে পাউডারে এর উপস্থিতি আছে কি না, তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা নেই।”

বাংলাদেশে জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্যের পরিবেশক এমএফ কনজ্যুমার্সের একজন মুখপাত্র বলেন, কোনো পণ্যের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। এক্ষেত্রে বিএসটিআই যদি কোনো উদ্যোগ নেয়, তাতে সহযোগিতা করবেন তারা।

বাজারে জনজন অ্যান্ড জনসনের অনেক নকল পণ্য থাকায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন এমএফ কনজ্যুমার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন আউয়াল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নকল প্রসাধনী উদ্ধার করে। জনসনের নকল পণ্যও বহুবার উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এই অপকর্মটি থামানো যাচ্ছে না।”

জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এক মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গত জুলাই মাসে ২২ জন নারীকে ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ওই নারীরা মামলায় অভিযোগ করেন, কয়েক দশক ধরে জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করায় তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

অভিযোগকারী ২২ নারীর মধ্যে ছয় জন ক্যান্সারে ভুগেই মারা যান।

জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও অন্তত নয় হাজার মামলা রয়েছে ‍যুক্তরষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে।

গত সপ্তাহে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বেশ কয়েক দফা পরীক্ষায় অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি ধরা পড়লেও তা গোপন করে বিক্রি চালিয়ে গেছে জনসন অ্যান্ড জনসন।

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেখানে জনসন অ্যান্ড জনসনের কারখানা থেকে বেবি পাউডারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়।

ভারতে উৎপাদিত ট্যালকম পাউডার বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপেও বিপণন করা হয়।

জনসন অ্যান্ড জনসন রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনকে ‘একতরফা, মিথ্যে ও রঙ চড়ানো’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, জনসন অ্যান্ড জনসেনের ট্যালকম পাউডারকে অ্যাজবেস্টসমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে তা নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। ভারতে তারা সরকারের বেঁধে  দেওয়া মান অনুসরণ করেই পণ্য উৎপাদন করে।