চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে ‘স্বস্তি’

সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে বোরো ধানের নতুন চালের চালান আসতে শুরু করায় কমেছে চালের বাজার; পাশাপাশি রোজার আগে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজ ও সবজির দামও কমে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2018, 11:42 AM
Updated : 25 May 2018, 11:42 AM

শুক্রবার রোজার প্রথম সপ্তাহ শেষে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন।

বোরো মওসুমের নতুন ধান আসার আগে বাজারে মিনিকেট চালের ৫০ কেজি বস্তার খুচরা মূল্য ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। আর গরিবের পছন্দের শীর্ষে থাকা পায়জাম ও বিআর আটাশ চালের দাম ছিল প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে আসতে শুরু করা নতুন মিনিকেটের বস্তা মানভেদে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

মিপুরপুর ১০ নম্বর চত্বরের কাছে মুদি দোকান মাহমুদ স্টোরের বিপণন কর্তা আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন চাল আসার পর দাম অনেকটা কমেছে। তবে পুরাতন চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

তার দোকানের নতুন ধানের বিআর আটাশ চাল দুই হাজার থেকে ২ হাজার ৫০ টাকায়, মিনিকেট ২ হাজার ৬০০ টাকায় এবং মোটা চাল ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান আনোয়ার।

খুচরায় প্রতিকেজি মিনিকেট ৫৬ টাকা, প্রতিকেজি বিআর আটাশ ৪৫ টাকা এবং প্রতিকেজি মোটা চাল ৪২ টাকা করে বিক্রি করছেন আনোয়ার।

মিরপুর-১ নম্বরে বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা জননী রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন ধানের চাল বাজারে আসার পর দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বলা যায়, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চালের দাম কমই রয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় চালের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।

“মিনিকেট পুরান চালো বস্তা যেখানে ২ হাজার ৯৫০ টাকা সেখানে নতুন চালের বস্তা (৫০কেজি) ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে নতুন লতা চাল দাম প্রতিবস্তা ১ হাজার ৯০০ টাকা। ভারতীয় মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। “

চালের দাম কমার বিষয়ে একই খবর দেন উত্তর বাড্ডার সাতারকুল রাইস এজেন্সির কর্মী বিপ্লব হোসেন।

তিনি বলেন, “নতুন চাল আসার পর দাম অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি বস্তায় অন্তত ২০ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে বিভিন্ন মিল মালিকরা।”

বেশ কয়েকদিনের বৃষ্টির সুযোগে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের বোরো মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় সেই ফসল ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবছর হেক্টর প্রতি তিন দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন ধানের আবাদ আশা করা হলেও বাস্তবে তা আরও বেশি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সর্বশেষ হিসাবে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক শূন্য তিন মেট্রেক টন হারে ফসল উৎপাদিত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে জেলাগুলো থেকে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

চালের মতো দাম কমেছে সবজি ও পেঁয়াজের।

বড়বাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা বনি আমিন জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। তবে ইতোমধ্যে বাজারে বেচাকেনা কমে গিয়েছে।

এই বাজারে পেঁপে ৪০ টাকা, কাকরল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, লতি ও বরবটি ৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বনি আমিন।

যদিও এক সপ্তাহ আগে বড়বাগে পেঁপে ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা ও ঢেঁড়শ ৬০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল।

মিরপুরের বড়বাগ কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে কোনো পণ্যের দাম নিয়ে এই মুহূর্তে অভিযোগ আপত্তি করার মতো কিছু নেই। পুরো রমজান মাসজুড়ে এই পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখাই সরকারের চ্যালেঞ্জ।

“অন্যবার রোজার আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও এবার তা কিছুটা কম হয়েছে। প্রথম রোজায় সবজির দাম অনেক বেড়ি গিয়েছিল। সেটাও এখন কমে এসেছে,” বলেন তিনি।

মহাখালী কাঁচাবাজারের একজন মুদি দোকানি জানান, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার কমেছে। গত সপ্তাহে তারা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা করে দেশি পেঁয়াজ এবং ৩৫ টাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে।

গত সপ্তাহে মূল্য বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। এদিন ব্রয়লারের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকায় এবং লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আর গরুর মাংস বিক্রি হয় প্রতিকেজি ৪৮০ টাকা দরে।