ইন্টারনেট বাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে চাই: মন্ত্রী

তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসা বিকাশের স্বার্থে দেশের সব জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2018, 01:20 PM
Updated : 15 April 2018, 02:12 PM

রোববার বিপিও সামিটের একটি সেশনে তিনি বলেন, “আমরা এখন ইউনিয়নগুলোতে কানেকটিভিটি পৌঁছানোর কাজ করছি। কেবল ইউনিয়নে নয়, বাড়ি-বাড়ি সেই কানেকটিভিটি পৌঁছাতে চাই।”

‘ক্যারিয়ার হিসাবে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)’ সেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

ইন্টারনেটের সংযোগ পৌঁছানো গেলে তথ্য প্রযুক্তিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে শহরের যে ‘শূন্যতা’ আছে সেটা পূরণ হবে বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফা জব্বার।

ওই সেশনের শেষে দেওয়া বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “আমি ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। সব গ্রাম ও বাড়ি পর্যন্ত নেটওয়ার্ক পৌঁছানোর আগে থামবার মানুষ নই।”

তথ্য প্রযুক্তি খাতে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে সরকার প্রশিক্ষণের উপর জোর দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ সংক্রান্ত নয়টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স চলছে।

“সরকার মূলত প্রশিক্ষণের জায়গাটা উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছে। সাতটি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করছি। আমরা ৬৪টি জেলায় করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।”

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রোববার তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিপিও সামিট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেবল সেটাতে লেগে থাকার পরামর্শ দেন মোস্তাফা জব্বার।

তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষ সীমা পর্যন্ত যেতে চায় না। কিছু সময় যাওয়ার পরই ঝরে যায়। সে কারণে ড্রপ আউটের সংখ্যা প্রচুর।

“এটা করব না ওটা করব, সেসব অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন স্তরে এদিক থেকে ওদিক চলে যায়। অস্থিরতার বাইরে এসে একটি পেশাকে ধরো।”

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় যোগ দিয়ে আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মালিহা নার্গিস বলেন, “প্রতিবেশী ভারত-শ্রীলঙ্কা আউটসোর্সিং থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, আমরা পারছি না। কারণ আমরা কিছু কাজ করছি, কিন্তু সেটা অর্গানাইজড না, এটাই আমাদের বড় সমস্যা।”

দক্ষ লোক তৈরি করতে পারলে কীভাবে প্রচুর আয় করা সম্ভব সে বিষয়ে ফিলিপিন্সে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন মালিহা।

তিনি বলেন, “একটি জায়গায়, ইংরেজি ভার্সনের জন্য জাপানিরা পুরোপুরি ফিলিপিন্সের উপর নির্ভর করছে। আইডিয়া, প্রকল্প সব জাপানের, কিন্তু সব কাজ করছে ফিলিপিনোরা।”

বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদাভিত্তিক লোক তৈরির জন্য সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার করা দরকার বলে মন্তব্য করেন মালিহা।

আইসিটি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, ১৪-১৫ লাখ সরকারি চাকরির বিপরীতে বেসরকারি খাতে অনেক চাকরি রয়েছে। সেজন্য দক্ষতা বাড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ।

“কেবল আইটি সেক্টরে ১০ লাখ লোক তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপিও সেক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। চাকরি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নানা দিকে না ঘুরে একদিকে নিবদ্ধ হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

প্রতিবন্ধীদের দিয়ে কল সেন্টার চালুর মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন ন্যাবেট ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্জুন মিশ্র।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, “কল সেন্টার আগে থেকে ছিল, কিন্তু প্রতিবন্ধী যারা তাদের দিয়েও যে এটা করানো যায় সেটা আমরা দেখিয়েছি। আমরা আর চ্যারিটির মধ্যে থাকিনি, তাদের দক্ষতা তৈরি করে তাদের আয়ে তাদের চলার ব্যবস্থা করেছি।”

উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমাদের আইডিয়া হতে হবে ভিন্ন রকম। এবং সেই আইডিয়া বিক্রি করার যথাযথ কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানের ‍মডারেটর ফিফো টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেন জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাতে এক লাখ উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ৪০ হাজার ইতোমধ্যে তৈরি হওয়ায় এখনও দরকার ৬০ হাজারের মতো দক্ষ যুবশক্তি।

অন্যদের মধ্যে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মাহতাবুল হক, মালয়েশিয়ার ইউরাস কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রাজকুমার রাজাশেখারান, স্টার কম্পিউটার্সের চিফ অপারেটিং অফিসার রেজওয়ানা খান, অগমেটিক্সের প্রশিক্ষক রুবাইয়া তানসিম, ফিফো টেকের কর্মী তামান্না সুলতানা বক্তব্য দেন।

এই সেশনের শেষে অনলাইনে বিপিও খাতে প্রশিক্ষণ কোর্স নিয়ে সরকারের এলআইসিটি প্রকল্প ও রেপটো আইটি লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।