মূল্যত নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজনে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া ‘রাঙতা’ নামের এই মেলায় ৪৪টি স্টলে পণ্যের পসরা সাজিয়েছে ৫৫টি উদ্যোগ।
মেলায় রয়েছে ছোট বড় বিভিন্ন বয়সীদের জামাকাপড়, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, চামড়ার পণ্য, দেশীয় তাঁতের শাড়ি, দেশীয় জামদানি শাড়ি, কাতান, নকশি শাড়ি, নকশিকাঁথা, হাতে তৈরি গয়না, রং-তুলিতে আঁকা পোশাক, ব্যাগ, প্রসাধনী, খেলনা, বিভিন্ন ধরণের খাবার যেমন- কেক, পেস্ট্রি, রসমালাই, মিষ্টি ও পিঠা।
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটির আয়োজক নারীদের নেটওয়ার্ক ‘মেয়ে’। প্রথমবারের মতো রাঙতা মেলায় অংশ নিচ্ছেন রসুইঘর ও তেরো পার্বন নামে স্টলের উদ্যোক্তা রাখিয়া হাবিব।
প্রথমবারের মতো রাঙতা মেলায় অংশ নেওয়া এই উদ্যোক্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে পণ্য বিক্রি করলেও ক্রেতারা সামনা সামনি দেখে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী। ক্রেতাদের চাহিদাকে মাথায় রেখেই এ মেলায় অংশ নিয়েছি।”
চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে তৈরি গহনার অনলাইন শপ ‘আয়নাঘর’ চালু করেন উদ্যোক্তা ফাহমিদা পান্না।
পুতি, কড়ি ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন নকশার পায়েল, কানের দুল, গলার মালাগুলো একবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নিজে হাতে তৈরি করেন এবং বিক্রি করেন।
ফাহমিদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অধিকাংশ ক্রেতাই ঢাকার বাইরের। অনলাইনে পণ্য যেহেতু সামনে থেকে দেখার সুযোগ থাকে না, এ ধরণের মেলায় আমরা আমাদের পণ্যগুলো ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।
বিভিন্ন নকশার দেশীয় পণ্যের সমাহার থাকায় ক্রেতারাও এই মেলায় আসতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্নিগ্ধা প্রতিবারই এ মেলায় আসেন বলে জানালেন।
বিডিনিউজ টায়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা যে শিল্পটা ধারণ করি, সেগুলো বিপণিবিতানগুলোতে তেমন পাই না। ভাল লাগা, ভালবাসার শিল্পটা এ মেলা থেকে পাই বলেই প্রতিবার এ মেলায় আসি।”
একটি স্টল থেকে হাতে তৈরি ডায়েরি কিনছিলেন চিকিৎসক নুশুর; বললেন, “হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্যগুলো আসলেই বাইরে পাই না। মার্কেটগুলোতে সব বিদেশি পণ্যের ছড়াছড়ি।
“এ মেলার বিভিন্ন দেশীয় পণ্যগুলো দেখতেই অসাধারণ লাগে। অন্যরকম একটা টান অনুভব করি।”
২০১১ সালের জুনে একটি ফেইসবুক গ্রুপ থেকে যাত্রা শুরু করে নারী উদ্যোক্তাদের অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক ‘মেয়ে’। নারীদের পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে এতে যোগ দিয়েছেন পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু নবীন উদ্যোক্তা নিয়ে শুরু হয় প্রথম ‘রাঙতা মেলা’।
ব্যবসায়িক মুনাফা নয় বরং দেশীয় পণ্যকে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য এই ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানালেন মেয়ে নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও রাঙতা মেলার একজন উদ্যোক্তা তৃষিয়া নাশতারান।
“মেলায় আমরা খুব সাড়া পাই, সেকারণে এবার বড় পরিসরে আমরা রাঙতার আয়োজন করেছি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সব পণ্য তৈরি করে থাকি।”
মেলায় কাতান, জামদানি, তাঁতের শাড়িগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮ হাজার পাঁচশ টাকায়, বিছানার চাদর মিলছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়, শতরঞ্জী বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশ থেকে আড়াই হাজার টাকায়, মেয়েদের কুর্তি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশো থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়, চামড়ার ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে পনেরোশ’ থেকে দুই হাজার চারশ’ টাকায়, বিভিন্ন ধরণের পেস্ট্রি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে তিনশো টাকায়।
এবার প্রথমবারের মতো মেলায় কার্ডে মূল্য পরিশোধের সুবিধা রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে থাকবে বাড়িতে মেলার পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা।
মেলা চলবে ৬ ও ৭ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।