একীভূতকরণ বাজারে টিকে থাকারই কৌশল: আজিয়াটা প্রেসিডেন্ট

দ্রুত বর্ধনশীল টেলিযোগাযোগ খাতের বাজারে অনেকগুলো অপারেটরের মধ্যে টিকে থেকে মানসম্মত সেবার পরিসর আরও বাড়াতেই একীভূতকরণকে ব্যবসার কৌশল হিসেবে নিয়েছে মোবাইল অপারেটর রবি।

শামীম আহমেদ মালয়শিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2016, 12:03 PM
Updated : 11 Oct 2016, 12:03 PM

মালয়শিয়ায় মঙ্গলবার শুরু হওয়া এক সম্মেলনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রশ্নের জবাবে এ কৌশলের কথা তুলে ধরেন রবির মূল কোম্পানি আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামালউদ্দিন ইব্রাহিম।

তিনি বলেন, “আজিয়াটার কৌশল হচ্ছে, একীভূতকরণের মাধ্যমে আরও বেশি অঞ্চলে মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া, যাতে অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে এগিয়ে যাওয়া যায়।”

রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে আজিয়াটার আমন্ত্রণে ‘রিজিওনাল মিডিয়া সামিট’ শিরোনামে তিন দিনের এই সম্মেলনে মালয়শিয়াসহ ৬টি দেশের আমন্ত্রিত সাংবাদিকরা অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্ন ছিল, “রবি ২০১২ সাল থেকেই মুনাফায় থাকার পরেও কেন এয়ারটেলকে রবির সঙ্গে একীভূত করার দরকার বলে ভেবেছিলেন? এই একীভূতকরণ রবির বাংলাদেশে বিনোয়োগে কী প্রভাব ফেলবে?”

জবাবে আজিয়াটা প্রেসিডেন্ট জামালউদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, “দ্রুত বর্ধনশীল এই শিল্পে ছোট অপারেটরের জন্য খুব একটা জায়গা নেই। এখানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও গ্রাহকদের কাছে আবেদন বাড়াতে হলে শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

“আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। দুটি নেটওয়ার্ক একীভূত করলে আমরা অর্থনৈতিক মাপকাঠি অর্জন করতে পারব, একা থাকা ঠিক নয়।”

এ প্রসঙ্গে শ্রীলংকায় আজিয়াটার দুটি কোম্পানি কিনে নেওয়ার এবং কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় অন্য অপারেটরকে একীভূত করে নেওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “পাশাপাশি বাংলাদেশে এয়ারটেলকে একীভূতকরণের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে আরও এগিয়ে যেতে চাই।”

আজিয়াটা প্রধানের মতে, বাংলাদেশে কর্মরত পাঁচটি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে শুধু তিনটি ভাল অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, “এই শিল্পে অনেক অপারেটরের মধ্যে টিকে থাকা কষ্টকর।এর জন্য একীভূতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কৌশল হচ্ছে, একীভূতকরণের মাধ্যমে আরও বেশি অঞ্চলে মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া যাতে অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে এগিয়ে যাওয়া যায়।”

বাংলাদেশের দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব গত অগাস্টে হাই কোর্টের অনুমোদন পেয়েছে।

দুই অপারেটরের দেনা-পাওনার হিসাবে আদালতের সম্মতি পাওয়ায় এখন কারও কোনো আপত্তি না থাকলে বিটিআরসি এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

একীভূত হওয়ার পর এই কোম্পানি পরিণত হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে; রবি নামেই বাজারে ব্যবসা করবে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাই মাসের হালনাগাদ হিসাবে, বৈধ মোবাইল সিমের হিসাবে গ্রামীণফোন ৫ কোটি ৬৩ লাখ গ্রাহক নিয়ে অপারেটরদের শীর্ষে রয়েছে। এর পরেই বাংলালিংকের অবস্থান; গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার।

তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রবি (২ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার) ও এয়ারটেল (৯৩ লাখ ৫৪ হাজার)।

সে হিসেবে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হলে কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার। সেক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের পরেই হবে রবির অবস্থান।

২০১৬ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে রবি।

রবির মালিকানায় রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ। অন্যদিকে এয়ারটেলের মালিক ভারতের ভারতি এয়ারটেল; তারা বাংলাদেশে ওয়ারিদ টেলিকম কিনে নিয়েছিল।

এশিয়ার বড় টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজিয়াটা অন্যতম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পাশাপাশি কম্বোডিয়া, ভারত ও সিঙ্গাপুরেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে আজিয়াটার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন জামালউদ্দিন ইব্রাহিম।