“আমরা মানুষেরা যেমন সুন্দর কাপড় পরলে দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি মালায় গরুকে আরও সুন্দর লাগে”, বললেন এক ক্রেতা।
Published : 15 Jun 2024, 12:14 PM
কোরবানির পশুর হাটে কেবল গরু, ছাগল, মহিষ বা অন্য কোনো প্রাণীই বিক্রি হয় না, বিক্রি হয় আরও কিছু উপকরণ যার মধ্যে আছে মালাও।
কাগজের তৈরি এই মালাগুলো পশুর ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই কেনেন। গরুর গলায় পরিয়ে সেগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা এটি।
হাটের মালাগুলোর দাম সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ টাকার ভেতর। তবে অনলাইনে পাওয়া যায় আরও বাহারি মালা, বিক্রেতাদের দাবি, সেগুলো আমদানি করা। দাম আছে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে কেবল পশুর গায়ে কেমন মাংস, এই বিষয়টি বিবেচনায় থাকে না ক্রেতাদের। পশুর গায়ের রং বা দৈহিক সৌন্দর্য দেখেও দাম উঠানামা করে। তাই সাজসজ্জাতেও জোর দেন বিক্রেতারা।
হাটে হাটে লাল, সাদা, হলুদ নানা রঙের মালা নিয়ে ঘুরছেন হকাররা। এসব মালা গরুর গলা, শিংয়ে, পেট বা মাথায় বিভিন্ন জায়গায় ঝোলাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
হাটে গরু আনা অনেকেই যেমন আছেন ব্যাপারী, আছেন ছোট ছোট খামারিও। ব্যাপারীর চেয়ে গরুর প্রতি মায়া তাদেরই বেশি। তাদের মধ্যে হাটে গরু আনার সময় বা হাটে আনার পরই মালা খোঁজেন।
মালা বিক্রেতারাও আছেন মহা খুশিতে। ঈদের আগের পাঁচ থেকে ছয় দিনই তাদের ব্যবসা হয়। তাই দামও হাঁকছেন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি।
শুক্রবার রাজধানীর ৩০০ ফিট (পূর্বাচল) ও নীলা মার্কেট গরুর হাট ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় বিক্রেতারা মালা কিনতে হাঁকডাক দিচ্ছেন। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের ও মানের মালা রয়েছে তাদের কাছে।
৩০০ ফিট হাটে ক্রেতা আনিসুল হক বলেন, “আমরা মানুষেরা যেমন সুন্দর কাপড় পরলে দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি মালায় গরুকে আরও সুন্দর লাগে। দাম কিন্তু খুব বেশি না।”
মালা বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত প্লাস্টিকের তৈরি মালা বিক্রি করেছেন অন্তত ৩০ টি। একেকটার দাম ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। ১০০ টাকার মালার চাহিদা বেশি বলে জানালেন তিনি।
একই হাটে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৭৫ টির মত মালা বিক্রি করেছেন মো. আকিকুল। মালা বিক্রির জন্য তিনি বৃহস্পতিবার চার দিনের জন্য উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর থেকে এসেছেন। উঠেছেন পরিচিত একজনের বাসায়। মালা এনেছেন ৫০০ টি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু কোরবানির ঈদের এই কয়ডা দিনই মালা মানুষ কিনে। তাই একটু লাভেই বেচি।”
উত্তরার পাশে দিয়াবাড়ি হাটে না গিয়ে ৩০০ ফিট আসার কারণ জানতে চাইলে আকিকুল বলেন, “বুধবার গেছিলাম। কিন্তু হকার বেশি। তাই এখানে চলে আসছি। আর এখানে গরু বেশি।”
তার কাছ থেকে ৯০ টাকা দিয়ে দুইটা মালা কিনলেন জামিল হোসেন। এক গরুকেই পরালেন দুটি।
জামিল বললেন, “কোরবানির গরুকে একটু সাজিয়ে বাসায় নেব, সবাই দেখবে। এটা ভালো লাগে। পছন্দ করে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম। সেটা একটু আকর্ষণীয় দেখাক, এটা কে না চায়?”
হাটে বাঁশ পুঁতে মালা ঝুলিয়েছেন আশরাফ উদ্দিন। নিজে বসেছেন চট বিছিয়ে। তার কাছে মালার সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে গরুর দড়িও।
নীলা মার্কেট হাটে ‘আশা’ আর ‘ভরসা’ নামে দেশি দুই গরু প্রায় একই রকমের বয়স ও গড়নের। কুষ্টিয়ার সদর থেকে আনা হয়েছে তাদেরকে। দাম হাঁকা হচ্ছিল প্রতিটি চার লাখ করে।
বিক্রেতা ইউনুস মিয়া নিজের বাড়িতেই পেলেছেন গরু দুইটিকে। বাজারে এনে শখ করে গরু দুইটির গলায় মালা পড়িয়েছেন তিনি।
কেবল গরু না, ছাগলের গলাতেও মালার দেখা মেলে।
আকিকুলের কাছ থেকে মালা কিনে ছাগলের গলায় দিলেন এক খামারি। তিনি বলেন, “এই দুইটা ছাগল আমার সবগুলো ছাগলের চেয়ে একটু বড়। তাই দামও বেশি।”
অনলাইনে দামি মালা
অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে গরুর মালা। তবে অনলাইনেরগুলোর দাম বাজারের তুলনায় বেশি, মানও ভালো।
বিক্রয় ডটকমে দেখা যায়, ‘কোরবানির পশুর পাকিস্তানি শাহীন শাহ্ মালা’ গলা, মাথা ও পেটের একটি সেট যার দাম দেওয়া হয়েছে ১৫০০ টাকা। অ্যাগ্রো মোকাম নামে একটি সাইটে দেখা যায় ‘কাউ শাহী মালা’ ৫ হাজার টাকা।