দুর্দশা কাটাতে ব্যাংকের মত সুযোগ সুবিধা চেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
Published : 25 Sep 2024, 09:05 PM
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে দুর্দশায় পড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে কর্ম পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই পরিকল্পনা চান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত কয়েকটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ঋণ ফেরত পাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয়েছে মূলধন সংকট।
এ বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. হুসনে আরা শিখা বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো নিয়ে তারা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে তারা ব্যাংকের মত সুযোগ সুবিধা চায়।
“খেলাপি ঋণ টানা দুই বছরে আদায় করতে না পারলে ব্যাংক তা অবলোপন বা রাইট-অফ করতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দুই বছরে অবলোপন করার সুবিধা চায়।”
আবার প্রভিশনের একটি অংশ মুনাফায় দেখাতে চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধেও সময় বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
তবে গভর্নর পুরো খাত সংস্কারে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে বলেন এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এ খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন যে খেলাপি ঋণ আছে এবং যে তারল্য সংকট, সেটার সমাধানে গভর্নর একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে রেকর্ড ২৩ হাজার ২০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
এ খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিতরণ করা ঋণের ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
এই দুর্দশার মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন– এই তিন মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সাড়ে ৪৮ হাজারের বেশি ব্যক্তি আমানতকারী।
তবে একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর সংখ্যা এক হাজারের মত বেড়েছে। তাতে সব মিলিয়ে তিন মাসে আমানতকারীর কমেছে সাড়ে ৪৭ হাজারের মত। আর এক বছরে আমানতকারী কমার সংখ্যা ৮৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত।
এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ কোম্পানির তারল্য সংকট রয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তাই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাবকে দায়ী করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাতই এখন তার জের টানছে। পি কে হালদারের মালিকানা আছে বা ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।