গণ আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবিরতাকে এর কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
Published : 13 Sep 2024, 11:20 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই-অগাস্ট মাসে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিতে; এর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতাকেও আমদানি কমার কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত জুলাই ও অগাস্টে ১০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার কম। শতাংশের হিসাবে তা ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। ওই বছরের জুলাই-অগাস্টে এলসি খোলা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের।
আবার ওই দুই মাসে ১০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানির এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে, আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ কম নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কারণ বলে মনে করছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুই কারণে আমদানির এলসি খোলা কমেছে। প্রথমত, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার সেসময় ব্যাংকও বন্ধ ছিল। তাতে আমদানি-রপ্তানিতে সরাসরি ব্যাঘাত ঘটেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সারাদেশে, যার ফলে সরাসরি আমদানিতে প্রভাব পড়েছে।”
এলসি কমার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পিছুটান দেওয়ার কথা বলছেন এ ব্যাংকার।
তার ভাষ্য, “আগের মত তারা বিনিয়োগ করছেন না, তাতে আমদানি কমেছে। এটা কমে যাওয়ার কারণ ডলার দরে অস্থিতিশীলতা। তবে এখন ডলার দরে স্থিতিশীলতা আসছে। এটা বজায় থাকলে আবার বিনিয়োগ বাড়বে।”
গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে রূপ নেয় সরকার পতনের গণ আন্দোলনে। আন্দোলনের মধ্যে সহিংস পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়া ইন্টারনেট। কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেসময় ব্যাংকসহ অফিস-আদালতের কার্যক্রমও থেমে গিয়েছিল। পরে ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে ৫ অগাস্ট দেশ ছাড়েন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার সঙ্গে বিভিন্ন কারখানাতেও ভাঙচুর হয়। দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়েও কারখানাগুলোতে বিক্ষোভ আর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেইসঙ্গে পুলিশি তৎপরতা না থাকায় নিরাপত্তা সংকটে অনেক কারখানাই বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল। এসব কারণগুলোও আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এলসি খোলা কমার প্রশ্নে এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগাস্টে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুর হয়েছে। তাতে অনেকদিন ধরে এসব কারখানাও বন্ধ ছিল। তাই আমদানি-রপ্তানি উভয়খাতেই এর প্রভাব পড়েছে।”
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতির জন্য পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “অন্তরবর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ব্যবসায় স্বাভাবিকতা আসছে। সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে কোনো রকমের সমস্যা তৈরি না হয়।”