দামের এ ঊর্ধ্বগতির খবরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নেমেছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে।
Published : 09 Dec 2023, 08:24 PM
ভারতের রপ্তানি বন্ধের এক খবরেই রাতারাতি পেঁয়াজের বাজার তেঁতে উঠেছে; এক দিন না যেতেই দেশজুড়ে খুচরা ও পাইকারিতে দামে উল্লম্ফন হয়েছে।
দাম আরও বাড়তে পারে এমন গুঞ্জনে পেঁয়াজের সরবরাহও কমেছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এতে শনিবার সকাল থেকে রান্নার কাজে নিত্য ব্যবহার করা এ পণ্যের দামের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এক দিনের মধ্যে কোথাও কোথাও দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা কেজি পর্যন্ত দরে।
এদিন সকাল থেকেই ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা কেজি দরে। কোনো কোনো এলাকার গলির দোকানে ২২০ টাকার নিচে এই পেঁয়াজ বেচতে চাননি দোকানিরা। আগের দিন শুক্রবারও এ দর ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
অপরদিকে শনিবার কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। আগের দিন এ দর ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
দামের এ ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই শনিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালায় কারওয়ান বাজার ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে। সেখানে কর্মকর্তারা ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রিতে বাধ্য করার পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করে।
পেঁয়াজের দামে এমন উল্লম্ফনের পেছনে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরই কাজ করেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক এ দর বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ মুদির দোকানে উচ্চ মূল্যে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর ডিজিএফটি আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। শুক্রবার এ খবর আসে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই প্রতিবেশি দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধেই করে দিল।
রাজধানীর মিরপুর, মহাখালী ও কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মিরপুর রূপনগর সোনার বাংলা কাঁচাবাজরের মায়ের দোয়া স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা এবং ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ মান ভেদে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে পাশের কয়েকটি দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা গেলেও দেশি পেঁয়াজের দেখা পাওয়া যায়নি।
বিক্রেতা মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাইকারি বাজারে গিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির দাম বলে ১৬০ টাকা। অনেক ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত কাস্টমারের চাহিদা মাথায় রেখে এক মণ পেঁয়াজ আনি। এরমধ্যে কিছু নষ্ট হয় ও শুকিয়ে ওজন কমে। আবার পরিবহন খরচও আছে। তাই আমার চালান পেতে হলেও ১৮০ টাকার কমে বেচতে পারি না।”
এ দোকানের সামনে এক কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সোলায়মান।
তিনি বলেন, “মাত্র এক দুদিনের ব্যবধানে একটা পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় এটা ভাবতেই পারছি না।”
তিন মাসের বেশি সময় ধরে দেশে পেয়াঁজের সংকট দেখা দিয়েছে। এরপরও সরকার আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এত বিপুল ভোক্তার একটা দেশে প্রধান খাদ্যপণ্যগুলোর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আসছিলাম ২/৩ কেজি পেঁয়াজ কিনব। কিন্তু দাম দেখে ১ কেজি কিনে চলে যাচ্ছি।”
মিরপুর-১১ কাঁচাবাজারের সোহাগ মিয়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ২২০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়।
তিনি বলেন, “শুক্রবার সকালেও আমি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু বিকালে খবর পাই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ কইরা দিছে। আজকে সকালে পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখি দাম ডাবল হয়ে গেছে। তাই আমার ও ডাবল দামে বেচতে হচ্ছে।”
মহাখালী কাঁচাবাজারের ইসমাইল স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
বিক্রেতা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি কারওয়ান বাজার থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৬০ এবং দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকায় কিনে এনে সকল খরচ ও অবচয় মিলিয়ে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। হিসাব করলে এই পণ্যটি বিক্রি করে হয়ত তার লাভ নাও হতে পারে।
মিরপুর-১ শাহআলী পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় এবং দেশি পেঁয়াজের যোগান কম। দিনের প্রথমভাগ থেকেই দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম চড়া। এই পাইকারি বাজারে বরং ভারতীয় পেঁয়াজের যোগান কিছুটা দেখা গেলেও দেশি পেঁয়াজের যোগান কম দেখা গেছে।
এ বাজারের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাহআলী বোগদাদী বাণিজ্যালয় এর ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আমি মূলত দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করি। তবে ভারতীয়ও কিছু বিক্রি করি। কিন্তু পাবনা ও ফরিদপুরে এখন দেশি পেঁয়াজের যোগান না থাকায় এখন পেঁয়াজ পাচ্ছি না। তাই দেশি পেঁয়াজ বিক্রিও করতে পারছি না।
“তবে কয়েকদিন আগে এলসি করে রাখায় ভারতীয় কিছু পেঁয়াজ পেয়েছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। তাই গতকাল ১০০ টাকায় বিক্রি করা ভারতীয় পেয়াজ আজকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে” জানান তিনি।
মিরপুরের প্রধান এ পাইকারি বাজারের আল ইমরান বাণিজ্যালয় ভান্ডারে গিয়ে দেখা যায়, এ দোকানে দেশি পেঁয়াজ থাকলেও দাম হাঁকছেন ২০০ টাকা কেজি।
বিক্রেতা মো. নাহিদ হাসান বলেন, “আমি পাবনা থেকে পেঁয়াজ আনি। মৌসুমের একদম শেষ পর্যায় বলে এমনিতেই পেঁয়াজের মজুদ শেষ। তারওপর ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার খবরে পাবনা ও ফরিদপুরে দেশি পেঁয়াজের মোকামেও দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমাদেরও বাধ্য হয়ে ২০০ টাকা কেজিতে বেচতে হচ্ছে।”
তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে পারে বলে জানান তিনি।