রিয়াদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের।
Published : 01 Jul 2024, 10:12 PM
দেশের অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার রিয়াদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বৈঠকে বাংলাদেশে, বিশেষত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং দেশের অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৌদি বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।”
আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুযোগ তৈরি করে গত মার্চে একটি বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। এ ব্যবস্থায় প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বাইরে পৃথক ব্যবস্থায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়ার দুই কার্যক্রমই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে ও বিদেশি গ্রাহকদের দেওয়া হয়।
ওই আইনে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিংয়ে বিদেশের বিভিন্ন উৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল নেওয়া যাবে।
এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা ক্ষেত্রমত বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কসমূহের শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহি:লেনদেন সেবা প্রদান করতে পারবে।
ওই আইনে বলা হয়েছে, অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যে কোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। এ ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যেকোনো প্রকাশ শুল্ক ও লেভি মুক্তও হবে।
অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি বিনিয়োগের বিষয় বৈঠকে ‘প্রাধান্য’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের খবর দিয়ে বলা হয়, “বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের কাছে উদ্বেগজনক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সমন্বয় জোরদারের বিষয়ে কথা হয়েছে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদকে (জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল-জেবিসি) দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
সৌদি আরব থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে আলোচনা করেছেন বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়, সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিতে আরো স্বচ্ছতা আনা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের শ্রমিক হয়রানি বন্ধে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
“পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সৌদি আরবে ব্যবসারত বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা চাইলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা থামাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে আলোচনা হয়।
“পাশাপাশি আগামী বছর সৌদি-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর যথাযথ উদযাপনে যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের বৈঠককে মন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।”
অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলাম, মহাপরিচালক (পশ্চিম এশিয়া) শফিকুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।