”আমাদের বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের এই নিও লিবারেল ইকোনমিক পলিসি ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে।“
Published : 04 Nov 2024, 02:51 PM
জ্বালানি সংকট সমাধানে ‘পরিবেশবান্ধব গণমুখী জ্বালানি নীতি’ প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার।
এই নীতি প্রণয়নে চিন্তাভাবনার ধরনেও পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর নিকুঞ্জে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদর দপ্তরে ‘বিদ্যুৎ রূপান্তর কোন পথে?' শীর্ষক সেমিনারে কথা বলছিলেন ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেন, “এনার্জির কথা আমরা যখন বলি, আমাদের অবশ্যই গাছপালার কথা বলতে হবে, অবশ্যই পরিবেশের কথা বলতে হবে। যে ভাষায় বলেন না কেন, আপনাকে অবশ্যই পরিবেশ এবং প্রকৃতিবান্ধব গণমুখী জ্বালানি নীতি করতে হবে।”
নীতি প্রণয়ন নিয়ে তিনি বলেন, “নীতি তৈরির জন্য আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, ইতোমধ্যে যে কাজগুলো হয়ে গেছে, সে কাজগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসা।”
এ কাজে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান বা প্রাইভেটাইজেশন বাদ দিতে হবে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, “বড়-বড় কোম্পানিগুলোর কাছে আমরা আমাদের জ্বালানি তুলে দিচ্ছি। আমাদের সম্পদ কিন্তু। আমাদের সরকারও কাগজে কলমে মানে এগুলো জনগণের সম্পদ।
“কিন্তু, আমলারা তুলে দিচ্ছে বিদেশি কোম্পানির হাতে। আমাদের বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের এই নিও লিবারেল ইকোনমিক পলিসি ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। কারণ, এই পলিসির বাস্তবায়ন হয় আমলাদের দ্বারা। এই আমলাতন্ত্রের বিনাশ হতে হবে। তা না হলে আমরা আমাদের জ্বালানির সমস্যা সমাধান করতে পারব না।”
দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একীভূতকরণ এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের (আউটসোর্সিং) চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো।
সব শেষ গেল ১৭ অক্টোবর দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সমিতিগুলো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ শুরু করে।
পরে সেদিন বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে আশ্বাস পাওয়ার পর কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
সে প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, “এখন সংকটটা কোথায় তৈরি হয়েছে? আমরা ধরেই নিয়েছি যে আমরা বোধ হয় এখনো শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের অধীনে আছি। এটা তো হল না। এবং সে কারণে আমরা যখনই পজিশনের বিরুদ্ধে দাঁড়াই আমরা কিন্তু এটা ইলিউশন থেকে বা পুরনো অভ্যাস থেকে করেছি। এটা তো আপনাদের প্রতিষ্ঠান।”
বিদ্যুৎ খাতকে গড়তে সময় চেয়ে তিনি বলেন, “এটাকে তো আমরা গড়তে পারব, সময় দিবেন। আমাদের ছাত্ররা এখনও আন্দোলন করছে। কারণ, আমরা যেটা করতে চেয়েছি, সেটা কিন্তু আমরা এখনও করতে পারি নাই। ফলে, সংকটটা কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে রয়ে গেছে।
“এটি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে আছে শুধু তা না কিন্তু। রাষ্ট্রীয় সংকট প্রতিফলিত হয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যে আন্দোলনটা চলছে, তরুণদের যে আন্দোলন চলছে এবং আমাদের সৈনিকরাও যে আন্দোলনে যুক্ত আছে নানাভাবে, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেও অনেকেই আছেন জনগণের বন্ধু, তারাও এর সঙ্গে জড়িত আছেন। এটা তো আমাদের অবস্থান।”
বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের কাজের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, “রাষ্ট্রের যারা দায়িত্ব এখন আছেন, তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করুন। তাদের যত খুশি সমালোচনা করুন। কিন্তু, যখন আপনারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন, তখন স্বভাবতই এটাকে আমরা অন্তর্ঘাতমূলক হিসেবে দেখব।
“আমি তো সারাক্ষণই এই সরকারের সমালোচনা করছি। সরকারের সমালোচনা করছি, কিন্তু এই সরকারকে তো দুর্বল হতে আমরা দেব না। আমরা তো সামনে যাওয়ার জন্য সমালোচনা করছি, পেছনে যাওয়ার জন্য সমালোচনা না।”
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহাম্মদ বক্তব্য রাখেন।