আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন: অর্থমন্ত্রী

“আপনাদের সব প্রস্তাবই মেনে নেওয়া হবে। তবে এই বাজেটে সব আসবে না। বাজেট তো একবারের জন্য না, আরো বাজেট আসছে,” ব্যবসায়ীদের বলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2023, 03:49 PM
Updated : 13 April 2023, 03:49 PM

ভ্যাট, আয়করসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের একগুচ্ছ প্রস্তাব শুনে ধাপে ধাপে তার সবই মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, “আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন। এবারের বাজেট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনারা ঠকবেন না।”

আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তৈরির আগে রেওয়াজ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরার্মশক কমিটির সভায় বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেখানেই তার এ প্রতিশ্রুতি আসে।

তবে একবারে যে সব দাবি পূরণ করা সম্ভব না, সে কথা জানিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের সব প্রস্তাবই মেনে নেওয়া হবে। তবে এই বাজেটে সব আসবে না। বাজেট তো একবারের জন্য না, আরো বাজেট আসছে, ধীরে ধীরে বাজেটে তা মেনে নেওয়া হবে।”

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসিম উদ্দিন এ সভায় সামগ্রিকভাবে আটটি প্রস্তাব তুলে ধরেন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।

পৃথকভাবে ভ্যাট ব্যবস্থা নিয়ে ১১৬টি এবং আয়কর বিষয়ে ১১৯টি প্রস্তাব এবং এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লিখিত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।

উন্মুক্ত আলোচনায় খাতভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে আগাম কর ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, ব্যক্তিগত আয়কর সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করা এবং দেশীয় পণ্যর ওপর ভ্যাট ‘যৌক্তিকিকরণের’ প্রস্তাব রাখেন।

হিমায়িত খাদ্য চিংড়ি থেকে উৎসে কর শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি করেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন।

খাদ্যপণ্যর ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি) এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট তুলে দিয়ে গড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সমিতির মহাসচিব জনাব ইমরান হাসান ।

তিনি বলেন, “অনেক কারখানা ও শিল্প মালিক শ্রমিকদের দুপুরের খাবার দিতে চান। কিন্তু এত উচ্চ ভ্যাট থাকায় তারা পারছেন না। ভ্যাট কমিয়ে দিলে তারা পারবেন।”

ঢাকার বাইরে থেকে আসা নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, “দেশে অবৈধভাবে ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত ও চীন থেকে কাপড় আসছে। অথচ আমাদের দেশীয় কাপড় অনেক উন্নত মানের। বিদেশি কাপড়ের উপর শুল্কহার বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।”

এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান বলেন, সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা ‍মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে কর দিতে হবে। রাজস্ব বিভাগের সক্ষমতা নিয়ে মানুষের মনে শঙ্কা বাড়েছে। অতিদ্রুত কর বিভাগ পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে।

“সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনতে পারলে কর আদায় বাড়বে। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস স্থাপনের প্রয়োজন নেই।”

পাট খাতের উন্নয়নে উৎস কর কেটে রাখার নিয়ম তুলে দিয়ে আগাম কর ১ শতাংশের পরিবর্তে আগের মত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয় সভায়।

বাংলাদেশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি শাহিন আহমেদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত মেশিনারিজ আমদানির সুবিধা চান। চীন ও ভারত থেকে চামড়াজাত পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান।  

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব শোনার পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “আগামীতে এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করব যাতে কোনো ধরনের ঋণ নেওয়া না লাগে। বাজেট হবে এমন, যেন ঋণের প্রয়োজন না হয়, আগামীতে আর ঋণ নেব না।

“আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাব। জি-২০ দেশের সঙ্গে হবে বাংলাদেশের অবস্থান।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্বে আজ অর্থনীতির মন্দা অবস্থা বিরাজমান। তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের বেসরকারি খাত। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ থেকে ৩৫তম স্থানে এসেছে। এর অংশীদার সবাই।

“আমরা মনে করি, মানুষ সবকিছুই পারে। হত-দরিদ্র দেশ থেকে আমারা আজকের অবস্থানে এসেছি।” 

অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর তুলে দেওয়ার দাবি করে জসিম উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনতে হবে।

“দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সকল ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।”

রাজস্ব আহরণ এবং রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম বিভাগকে পৃথক করার দাবিটি পুনরায় তুলে ধরে জসিম উদ্দিন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করা যেতে পারে। বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য ও মিনিমাম ভ্যালু সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন রহিত করে ‘বিনিময় মূল্য’ সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথে বাংলাদেশ ‘দ্রুত’ এগিয়ে যাচ্ছে।

“এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে আমাদের সামনে। এর মধ্যে রয়েছে কর ছাড় ও কর সুবিধা তুলে দেওয়া।

“যারা কর ছাড় সুবিধা পাচ্ছিলেন, তাদের নিজেদের সক্ষমতার উপর দাঁড়াতে হবে, যাতে তারা পুরো কর দিতে পারেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি খাত সেই সক্ষমতায় এসেছে। তাদের করের আওতায় আনার সময় হয়েছে।”

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই পরামর্শক সভার আয়োজন করে এনবিআর।