“এই বছর কী যে হলো, ক্রেতা একেবারেই নেই। লোকজন কিছু আসলেও ঘুরে চলে যায়,” বলেন ‘বাটা’ শোরুমের কর্মী তরিকুল ইসলাম।
Published : 15 Mar 2025, 08:28 AM
সাধ্যের মধ্যে ‘মোটামুটি ধরনের’ ঈদের কেনাকাটা করতে চাইলে এক কথায় সবাই বলবে এলিফ্যান্ট রোডের কথা। শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবির সাথে এখানকার সারি সারি জুতার দোকানগুলোর আবেদনও বেশ পুরনো।
সাধারণত প্রতিবছর প্রথম রোজা থেকেই এলিফ্যান্ট রোডের বাটা, অ্যাপেক্স, বে, জেনিস, দীপালী, লিবার্টি, সাম্পান ও খড়মের মত জুতার দোকান ছাড়াও নন-ব্র্যান্ডের জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। আর রোজার মাঝামাঝিতে দোকানগুলোতে ঢোকাই দায় হয়ে পড়ে।
তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড- সব জুতার দোকানেই ক্রেতা খরা রোজার মাঝামাঝি সময়েও।
গত বৃহস্পতিবার এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি কয়েকশ জুতার দোকানে ক্রেতা হাতগোনা। ক্রেতা ধরতে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন বিক্রেতারা।
ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে লোকজন থাকলেও কেনাবেচা তেমন নেই বলে বিক্রয়কর্মীদের ভাষ্য। তারা বলছেন, ক্রেতারা এখনো নেড়েচেড়েই দেখছেন।
‘বাটা’র আউটলেটের ক্যাশ কাউন্টারে থাকা তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবার রমজানের প্রথম ১০ দিনে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার জুতা বিক্রি করি। এই বছর কী যে হল, ক্রেতা একেবারেই নেই। লোকজন কিছু এলেও ঘুরে দেখে চলে যায়। এই ১০-১২ দিনে ২০ লাখও বিক্রি করতে পারি নাই।
“তবে এবারও ঈদ সামনে রেখে নতুন কালেকশন এনেছে বাটা। আশা করি, শুক্রবার থেকে বেচাকেনা বাড়বে।”
অ্যাপেক্স-এর শোরুমে একই চিত্র; ক্রেতাদের ভিড় না থাকায় ক্যাশ কাউন্টারে বসে থাকা বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।
বিক্রয়কর্মী মো. নাসিম বলেন, “এবার বিক্রি কম, দেখা যাক সামনে কী অবস্থা হয়।”
‘লোটো’র শোরুমে ক্রেতারদের ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি তেমন নেই। ক্রেতারা বেশিরভাগই জুতা নেড়েচেড়ে দেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কিনছেন।
‘লোটো’র বিক্রয়কর্মী রোহান বললেন, “রোজার আগে যা বিক্রি হয়েছে, রোজা আসার পরে সেটা আরও কমেছে। পনের রমজানের পর থেকে হয়ত ভিড় বাড়বে এবং বেচাবিক্রি বাড়বে।”
‘বে’ ও ‘জেনিস’র শোরুমে চামড়ার স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি।
‘জেনিস’র শোরুমে স্যান্ডেল কিনতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাধব বণিক বলেন, “ঈদে তো পাঞ্জাবিই পরা হয়, পাঞ্জাবির সঙ্গে স্যান্ডেল পরব বলে এখানে কিনতে এসেছি। এখানে স্যান্ডেলের দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। দেখি পছন্দ করে একটা নিয়ে যাব।”
‘হাই ম্যানশন’ এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু জুতার মার্কেট রয়েছে এলিফ্যান্ট রোডে। হাই ম্যানশনের প্রতিটি গলিতে অন্তত ৩০-৪০টি দোকান।
এসব দোকানে ৩০০ টাকার চামড়ার সেন্ডেল থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকার সেন্ডেলও পাওয়া যায়। কেডস সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, চামড়ার জুতা এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা, বুট ২ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।
‘ফিট রাইট’ এর দোকানি মো. শিপলু বলেন, “বেচাবিক্রি নেই। রোজার আগেই বিক্রি ভালো ছিল, এখন দেখছেন না বসে আছি? এই সময়ে কি আমাদের বসার সুযোগ থাকে? ১৫-২০ রমজান থেকে বিক্রি বাড়তে পারে।”
এ বছরই এমন না কি প্রতিবছর রোজার প্রথম সময়ে এমন বেচাকেনা হয় জানতে চাইলে শিপলু বলেন, “এবারই কম বেচাকেনা, কেন তা জানি না। তবে অন্য বছর এমন সময় বসার কাস্টমারের ভিড় লেগে থাকত। বেচাকেনাও ভালো হত। রমজানের এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৬০-৭০ হাজার টাকার জুতা বিক্রি হয়, শেষ সপ্তাহে ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।”
পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী এক সঙ্গে জুতা কিনতে এসেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডে।
তাদের একজন মো. মাহবুবুল হক বললেন, “কাল (শুক্রবার) আমরা সবাই বাড়ি চলে যাব। এই মার্কেটে আমার পছন্দের সব জুতাই সাধ্যের মধ্যে কিনতে পারি। সু, কেডস, স্নিকার কিনতে তাই এখানেই আসা হয়।”
আমেনা ভবনের নিচতলার মার্কেটের ‘ইমেইরয়াল সু প্যালেসের’ বিক্রয়কর্মী মো. আফজাল হোসেন বলেন, “এখন বেচাবিক্রি রোজার আগে থেকে কম। গতবছর এই সময়ে আরও বেশি বিক্রি ছিল। সামনে হয়তো ক্রেতা বাড়বে।”
‘সু ফ্যাশন’ এর বিক্রয়কর্মী হাসান মাহমুদ বলেন, “বেচাকেনা একেবারেই ভালো না, মানুষ তো ঘর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাছাড়া স্কুলকলেজ বন্ধ, অনেকেই আগে কেনাকাটা করে চলে গেছে। আজকে এখনও ৫ হাজার টাকার জুতা বিক্রি করতে পারি নাই। অথচ আগে এই সময়ে ৫০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি হত প্রতিদিন।”
কেরানীগঞ্জ থেকে জুতা কিনতে এলিফ্যান্ট রোডে এসেছেন জিয়াউদ্দিন।
তিনি বলেন, “এলিফ্যান্ট রোডে জুতা কিনতে হলে দর-দাম করেই কিনতে হয়। দাম করে কিনতে পারলে অনেক কমদামে ভালো জুতা পাওয়া যায়। আমি সবসময় এখান থেকেই জুতা নিই। পাঞ্জাবির সঙ্গে মিল রেখে এক জোড়া জুতা কিনতে এসেছি। দেখি কী হয়?”