মহামারী: জরুরি প্রয়োজনে রাখা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা

ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে টিকাদানে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মহামারীকালে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বাজেটে এবারও ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 10:04 AM
Updated : 3 June 2021, 10:04 AM

তিনি দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার সরকারের লক্ষ্যের কথাও বাজেট বৃক্তৃতায় তুলে ধরেন।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়।

তার তৃতীয় বাজেট উপস্থাপনকালে সে কথাই তুলে ধরলেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, “সরকার দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্য টিকা প্রদান করবে। যত টাকাই লাগুক সরকার তা প্রদান করবে। সে লক্ষে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।“

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের বেশ কিছু অগ্রাধিকারের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচী অন্যতম।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “মহামারী মোকাবেলায় যা করণীয় তার সবকিছুই সরকার করবে। সে কারণে আগামী অর্থবছরে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য আবার ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।“

এই বরাদ্দের বাইরে টিকা কিনতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন সাপোর্ট পাওয়ার আশার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

জাতীয় জীবনে করোনাভাইরাস ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বাজেটের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তিনি টিকা সংগ্রহে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ভাগ ভাগ করে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা পাওয়া গেলে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে পাওয়া এই অর্থ টিকা কিনতে ব্যয় করা হবে।

টিকা সংগ্রহে চলত অর্থবছরে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষায় বিশ্বে বিনামূল্যে টিকা প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ।

অর্থমন্ত্রী দেশে এই পর্যন্ত টিকা আসা ও কেনার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয়ভাবে টিকা দেওয়া শুরু হয় দেশে।

দেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ, চীনের সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ এবং কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এসেছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড প্রয়োগের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়।

তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তবে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে সরকারে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেরাম ইনস্টিউট দুই চালানের পর আর টিকা পাঠাতে পারেনি।

এতে দেশে টিকাদান কর্মসূচি বড় ধরনের হোঁচট খেলে নতুন উৎস থেকে টিকা কিনতে তৎপর হয় সরকার।

এর অংশ হিসেবে চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা পেয়ে পেতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কেনার প্রস্তাবও সরকারের অনুমোদন পেয়েছে।

উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে পাওয়া এই টিকা দেশে প্রয়োগও শুরু হয়েছে।

রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুৎনিক-ভি কেনার জন্য সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

আর ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাচ্ছে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে।

সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এ নিয়ে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের মোট চারটি টিকা অনুমোদন পেল।

এর আগে কোভিশিল্ড, স্পুৎনিক-ভি ও সিনোফার্মের তৈরি টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়।