Published : 02 Sep 2011, 10:45 PM
জন্ম থেকেই দেখে আসছি বুড়িগঙ্গাকে। ঢাকাকে ঘিরে গড়ে উঠা বুড়িগঙ্গার কত শত ইতিহাস।সেই বুড়িগঙ্গা আজ মরে গেছে! আমরা বাঁচাতে পারছিনা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সৌন্দর্য, আমাদের গর্বের বুড়িগঙ্গাকে।
চারপাশে পরিবেশবাদীরা, সাধারণ মানুষেরা কত-ই না সোচ্চার বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে। শুধু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ভূমি দস্যুদের হাতে এর বিস্তীর্ণ অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত!
১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যা আর ঢাকাকে ঘিরে জলাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে তৎকালীন সামরিক শাসক এবং একপাল তথাকথিত নগর পরিকল্পনাকারীদের
সুপারিশে ঢাকা শহর রক্ষা বাধ বা ঢাকার চারপাশে বেড়ীবাঁধ দেয়ার এক বিশাল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে গিয়েই মূলত বুড়িগঙ্গার নাব্যতা, বুড়িগঙ্গার ব্যাপক অংশের স্রোতের গতিধারা বদলে ফেলা হয়।
আমার মনে আছে পূর্ণ বর্ষায় নদী যখন টইটম্বুর তখন-ই হাজার হাজার বালুর ট্রলার দিনরাত নদীবক্ষে বালু ফেলে যাচ্ছিল। নদীর তলদেশে কয়েক স্তর বালু তখনই এর পানির ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল। বলা যায় চর পড়ে গিয়েছিল।
এছাড়া রাজধানীর সোয়ারী ঘাট এলাকা, রহমতগঞ্জ, লালবাগ কেল্লার পিছনের অংশ, কেল্লার মোড়, শহীদ নগর, আমলিগোলা, নবাবগঞ্জ পার্ক, নদীর মাঝখানে টং জাতীয় ঘর করে থাকা জেলে পরিবার তথা জেলে পাড়া, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনের অংশ, কোম্পানি ঘাট, ঝাউচর, বছিলা, রায়ের বাজার টালি অফিসের নিম্নাংশ, মোহাম্মদপুরের নিম্নাংশ, গাবতলি হয়ে তুরাগ নদী পর্যন্ত সর্বত্র নদীর ২০০ থেকে ৫০০ মিটার পড়ে যায় বেড়িবাঁধের ভিতর অর্থাৎ কিছু লোক রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় যায়।
বাকী হাজার হাজার একর জমিন এক সময় বেদখল হয়ে যায় রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায়। প্রথমে ব্যাঙের ছাতার মত ভুঁইফোড় ক্লাব, সরকারী দলের অফিস, সমবায় সমিতি ইত্যাদির অফিস গজিয়ে উঠে পুরো বেড়ীবাঁধ এলাকায়। এক সময় ক্ষমতাসীন নেতাদের, ঘুষখোর প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্যে এসব জমি তাদের দখলে চলে যায়।
একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল ঠিক বুড়িগঙ্গার উপর এখনও সবার দিকে অঙ্গুলি তাক করে আছে! এরাই সর্বপ্রথম বেড়িবাঁধের বাইরে গিয়ে নদী ভরাট করে হাসপাতাল ও কলেজটি চালু করেন। শোনা যায় হাসপাতালটির মালিকের রাজনৈতিক প্রভাব এতো বেশি যে তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার জো নেই কারো!
সেই যে পলি বা বালু নদী গর্ভে নিক্ষেপ করা হয়েছিল যার কারণে বেড়ীবাঁধের বাইরের অংশে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়, বিভিন্ন স্থানে বিস্তীর্ণ জমি নজরে পড়ে ভূমি দস্যুদের।
ডিপজলের দখলে চলে যায় মিরপুরের গাবতলি এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বিরাট অংশ। লালবাগ-হাজারীবাগের প্রাক্তন দুই সাংসদ দখল করে নেন পুরো এলাকা! হাজি সেলিম বাবু বাজারের বিপরীত দিকে কালীগঞ্জে নদীর উপর বহুতল মার্কেট ভবন, রহমতগঞ্জ এলাকায় মদিনা প্লাস্টিকের গোডাউন সহ বহু যায়গা নিজ দখলে এবং দলীয় কর্মীদের দখলে সহায়তা দিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছিল।
আরেক প্রাক্তন সাংসদ হাজি পিন্টু প্রথমে বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী ভরাট করে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করার পরপরই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের দুই পাশের নদী অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যায় তাঁর-ই সহায়তায়। সেই সময় বেড়ীবাঁধের ভিতরের অংশে তাঁর নানার নামে খলিল সর্দার কৃষি মার্কেট নির্মাণ সহ অনেক জমি দখল করে নেন। জোট সরকারের আমলে কোম্পানি ঘাট কামরাঙির চর সংযোগ সেতুর টেন্ডার পায় নাসির উদ্দিন পিন্টুর নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশা এন্টারপ্রাইজ, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু নদী ভরাট করে সামান্য অংশে নির্মাণ করা হয়, সেতুটি অত্যন্ত সরু।
এই সেতু নির্মাণের সাথে সাথে সেতুর দুই পাশ ভূমি দস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে, চলে গেছে। নির্মিত হয়েছে বহুতল বিশিষ্ট ভবন, পান্না ব্যাটারি, গ্যাস ফিলিং ষ্টেশন,,,,,
( ছবিতে ব্রিজের একাংশ দেখানো হয়েছে)
এছাড়াও কেল্লার মোড় ,কামরাঙির চর, বছিলা, ঝাউচর এবং অন্যান্য স্থানে যে সব ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত সরু হওয়ায় ব্রিজের দুই পাশ ভরাট করে দখল করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী ২০০ গজের মালিকানা বি,আই,ডব্লিও,টি,সি'র। এই ২০০শত গজ বাদ দিয়েও প্রতিনিয়ত নদী ভরাট হচ্ছে, জবর দখল হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
(এরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেল কি করে?)
অবৈধ দখলকারীরা এসব সরকারি সম্পত্তি নিজেদের নামে কি করে রেকর্ড করে খাজনা-পাতি দিচ্ছে, কি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে জানতে চাই। কত টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ দখলদারদের হাতে সরকারি জমিন তুলে দেয়া হচ্ছে? তারা কারা? রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সাংসদদের লালসা কবে কমবে?
কেন অবৈধ দখলমুক্ত করা হবেনা এই মর্মে উচ্চ আদালতের নোটিশ জারি হলে কিম্বা পত্র-পত্রিকায় লেখা লিখি হলে কয়েকদিন তথাকথিত উচ্ছে অভিযান চলে, তারপর আবার সুনসান নীরবতা??
আমরা জনগণ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সবিনয় জানতে চাই আপনাদের কি কোন দায়িত্ব নেই? পরিবেশ বাঁচাতে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সরকারগুলো কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে?
***
(ছবি সত্ত্ব সংরক্ষিত)
***
ফিচার ছবি: বাংলাদেশ বার্তা, ১৭ জুলাই ২০১১