জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: নৈরাজ্য থামানোর কোন ব্যবস্থা কি নেয়া হয়েছে?

মধ্যরাতের হাইওয়ে
Published : 19 Sept 2011, 04:46 AM
Updated : 19 Sept 2011, 04:46 AM

সাড়ে তিন মাসের মাথায় সরকার আরেক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল। অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ফার্নেস তেলের দাম গত মে মাসের আগে ৬ এপ্রিলও প্রতি লিটার দুই টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।

জ্বালানি তেলের দাম সরকার কেন বাড়ায় সেইদিকে যাব না। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্যই সাধারণত এটি করা হয়ে থাকে। কিন্তু কথা হল শুধু দাম বাড়িয়েই সরকার পার পেয়ে যাবে কিনা? এর সাথে সরকারের আর কোন কাজ করতে হবে কিনা?

বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কি পরিমাণ বেড়েছে তা সকলেরই জানা আছে। সরকার হয়ত এই কথা বলে আত্নতৃপ্তি পেতে পারেন যে, কেউ তো না খেয়ে নেই। আমার ধারণা, তারা আত্মতুষ্টিতে ভোগেনও। কিন্তু এটি কোন সমাধান হতে পারে না। না খেয়ে হয়তো কেউ মরছে না, কিন্তু প্রতিবছর পুষ্টিহীনভাবে কি পরিমাণ শিশু বেড়ে উঠছে তার হিসাব সরকারের ভালভাবেই জানা আছে।

জ্বালানি তেলের সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয় অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হারে তেলের দাম বাড়ে তার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরিহবন সেক্টরের কথাই ধরা যাক। এই যে এখন তেলের দাম বাড়ানো হল, স্বাভাবিকভাবে গাড়ির মালিকরা গাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিবে। তারা তাদের ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করবে। শুরু হবে যাত্রীদের হয়রানি ও লাঞ্ছণা। বাকবিতন্ডা হবে, অনেক মারামারিও হবে। যেগুলো হয়তো পতিকায় আসবে না। কিন্তু আমি-আপনি সেগুলোর সাক্ষী। প্রতিবারই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নানা হাঙ্গামা হয়, তারপর সরকার একটি ভাড়ার চার্ট সরবরাহ করে। কেন? এই কাজটি যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় তখন প্রকাশ করতে পারে না। তাহলেতো আর এত হাঙ্গামা সৃষ্টি হয় না।

তেলের দাম বাড়ানো হল কয়েক ঘন্টার নোটিশে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী দুজনই দেশের বাহিরে। গত সপ্তাহে সম্ভবত সরকার তরফ থেকে বলা হয়েছিল খুব শীঘ্রই তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু সেটি যে মিথ্যা ছিল তার প্রমাণতো এক সপ্তাহের মধ্যেই মিলল। তেলের দাম যে বাড়াবের সেটাতো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা, হুট করেতো আর বাড়ানো হয়নি। তবে কেন মানুষের সাথে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া? আমরা জানি , এই খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দেয়। তাই কিছুদিন পরপরই এটার সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এর ফলে অপরদিকে জনগণের জীবনযাত্রার উপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যার উপর এর প্রভাব পড়ে না। সব ধরনের শিল্পোৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে।

গ্যাসএর দাম যখন বাড়ানো হল তখন তেল দ্বারা চালিত গাড়িরও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। আবার এখন যখন তেলের দাম বাড়ানো হল এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গ্যাস দ্বারা চালিত গাড়ির ভাড়াও বাড়ানো হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কিন্তু বলার কেউ নেই। সরকারতো দাম বাড়িয়েই খালাস। জনগণের দু:খ-দুর্দশা যদি তারা বুঝত সবকিছুর ভিতরে একটা সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করত। আগেরবার যখন দাম বাড়ানো হল, সেই সশয় পরিবহনখাতে যে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছিল তার রেশ এখনো মিলে যায়নি। তার উপরে আবার দাম বাড়ানো হল। কিন্তু ভাড়ার হিসাব কই? আমরা মগের মুল্লুকে বাস করছি। যে যেভাবে যেখান দিয়ে পারছে কেটে-কুটে, খাবলে-খুবলে নিয়ে যাচ্ছে। আর অসহায় জনগণ আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি। কিছু বলতেও পারবেন না। পিছনে রেব-পুলিশ, ডিজিএফআই কুত্তার মত লেলিয়ে দিবে। জীবন আপনার অতিষ্ঠ করে ফেলবে। বিচার চাইবেন কার কাছে, কার কাছে চাইবেন সমাধান?

জ্বালানি তেলের (ফার্নেস অয়েল) সাথে বিদ্যুতকের সম্পর্ক রয়েছে। খুব শিঘ্রই দেখবেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে আবার সব কিছুর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই দ্রব্য-মূল্যের দামও বাড়বে। তবে এই বাড়ার পরিমানটা আর নির্ধারিত হবে না। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে অসহনীয় করতে সব পদক্ষেপই নেয়া হয়, সহীয় করতে নয়।

যেই কথাটা বলতে চেয়েছি সেটি হল, শুধু জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েই সরকার তার দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। এর সাথে আনুষঙ্গিক কাজগুলোও সরকারের আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। যে হারে জ্বালানি তেল কিংবা বিদ্যুদের দাম বাড়ে সেই হারেই যাতে জিনিসপত্রের দাম কিংবা পরিবহন ব্যায় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত মনিটরিং ও পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী এর সমাধান হতে পারে।

গণপরিবহন ব্যয়: দেশের জ্বালানি তেলনির্ভর যাতায়াত ও গণপরিবহনব্যবস্থায়ও এই দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই খাতে বর্তমানে এমনিতেই বেশ বিশৃঙ্খলা চলছে। বিশেষ করে, নগর পরিবহনের কোনো যানবাহনই ভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের আরও উৎসাহিত করবে। সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। সরকার আগের মতোই এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হবে। (প্রথম আলো)

সরকার দাম বাড়িয়েই কাজ শেষ। পত্রিকাওয়ালারা লিখেই শেষ। টকশোআলারা টক করেই শেষ। আর জনগণ ধুঁকে ধুঁকে শেষ !!

***
ফিচার ছবি: www.burnyourfuel.com