ওয়েব সিরিজ নিয়ে ধারণা বদলাবে ‘তাকদীর’

পাভেল হাসান
Published : 1 Jan 2021, 06:21 PM
Updated : 1 Jan 2021, 06:21 PM

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিনোদনপ্রেমীদের একটু বেশি সুযোগ করে দিয়েছে। ঘরে বসে যখন-তখন একদম নতুন কিছু দেখতে পাওয়া যায় এখন। আগে সিনেমা হলে নতুন সিনেমা এলে অনেক ঝামেলা হতো; সিনেমা দেখতে গেলে টিকেটের লম্বা লাইন, টিকেট না পাওয়ার বেদনা, সিনেমা হলের পরিবেশ, উচ্চ মূল্যে কালোবাজারের টিকেট, সিনেমা হলের ভাঙ্গা চেয়ারে ছারপোকার সাথে বন্ধুত্ব করে সিনেমা দেখা।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসায় এখন অবশ্য সেই ঝামেলা নেই বললেই চলে। দর্শক চাইলেই এখন শুয়ে-বসে যেভাবেই হোক নতুন সিনেমা, নাটক, সিরিজ সব কিছুই দেখতে পারেন।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে নির্মিত একটি ওয়েব সিরিজ আমার দেখা হয়েছিল। সেই ওয়েব সিরিজটির  কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু ভালো থাকলেও অন্যান্য দিক দেখে আমি পুরো হতাশ ছিলাম; বাজে সংলাপ ও রগরগে দৃশ্য ছাড়া কোনো ওয়েব সিরিজ নির্মাণ হয় না বলেই আমার একটা বিশ্বাস ছিল। এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ভেবেছিলাম আর ওয়েব সিরিজ দেখব না।

এদিকে এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্টের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই থেকে কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে আট পর্বের ওয়েব সিরিজ 'তাকদীর'।  এই ওয়েব সিরিজ দেখার পর আমার আগের ভুল ধারনা ভেঙে গিয়েছে।

সৈয়দ আহমেদ শাওকির পরিচালনায় নির্মিত হয় তাকদীর; তার প্রথম কোনো কাজ দেখা হল আমার। তাকদীরে  চঞ্চল চৌধুরী, সানজিদা প্রীতি, মনোজ প্রামানিক, সোহেল মণ্ডল, পার্থ বড়ুয়া, ইন্তেখাব দিনার, মীর রাব্বিসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।

মঞ্চের অভিনয়ে যাদের হাতেখড়ি হয়, তাদের কাজে আলাদা একটি মেজাজ থেকে যায়; এ কথা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আরও একবার প্রমাণ করলেন। আমার জানা মতে শুধু উনি নন, এই সিরিজে কাজ করা অধিকাংশ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল মঞ্চে। এই কারণে তাকদীরের প্রাণ হয়ে উঠেছিল এদের সবার অভিনয়।

লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের ড্রাইভার চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। হইচইয়ের ইউটিউব অফিশিয়াল চ্যানেলে চঞ্চল চৌধুরীর একটি অডিশন ক্লিপ দেখেছিলাম। অডিশন ক্লিপে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের ড্রাইভার চরিত্রের কথা শুনে যতটা উনি চমকে গিয়েছিলেন, দর্শকরা সেই ড্রাইভার চরিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা দেখে তার থেকেও বেশি চমকে যাবেন। চরিত্রের যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে উনার অভিনয়ে। আয়নাবাজির আয়নার পরে তাকদীরের তাকদীর, এভাবে চঞ্চল চৌধুরীর ঝুলিতে যোগ হোক আরও নতুন নতুন চরিত্র।

মূল চরিত্রের সাথে পার্শ্ব চরিত্রেরও একটা ভূমিকা থাকে।  আজকাল  নাটক সিনেমায় খেয়াল করলাম,  মুল কাহিনীতে পার্শ্ব চরিত্রের দুর্দান্ত দাপট।  মন্টু হল তাকদীরের তেমনি একটি পার্শ্ব চরিত্র।  মন্টু চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মন্ডল।  কিছু দৃশ্যে মূল চরিত্রকেও ছাপিয়ে গেছে এই মন্টু চরিত্র। অর্থ্যাৎ সোহেল মন্ডল অনেক ভালো কাজ করেছেন।

মন্টু চরিত্রের ছোটবেলার দৃশ্যায়নে একজন শিশু চরিত্রকে দেখানো হয়েছে, সেটাও অনেক প্রশংসার দাবিদার। ছোটবেলার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন উনিও বেশ সরব ছিলেন মনটু চরিত্রে। অন্তত একটি দৃশ্যে আমার মন ছুঁয়ে গেছে।

সাংবাদিক আফসানার চরিত্রে সানজিদা প্রীতিকে বেশ মানিয়েছিল। ফটো সাংবাদিক মইনুল রানার চরিত্রে  ছিলেন মনোজ প্রামাণিক। চেয়ারম্যানের চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার এবং  মন্দলোকের  চরিত্রে ছিলেন পার্থ বড়ুয়া।  আগামিতে মন্দলোকের চরিত্রে পার্থ বড়ুয়াকে আরো দেখার আগ্রহ থাকলো।

কয়েকটি চরিত্রের বিন্যাস খুব কম দেখা গিয়েছে। পরিচালক চাইলে বোধহয় সেগুলো একটু বিন্যাস করতে পারতেন।

তাকদীরে ডোমের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনি প্রশংসার দাবিদার। ছোট্ট একটা চরিত্র দিয়েও যে মানুষকে হাসানো যায় তা উনি প্রমাণ করেছেন। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে,  অভিনয় করতে জানলে চরিত্রের দীর্ঘ ব্যাপ্তিকাল প্রয়োজন হয় না; ছোট চরিত্র দিয়েই দর্শক মনে জায়গা করে নেওয়া যায়।

সিরিজের শুরুতে একজন সাংবাদিককে দেওয়া ক্যামেরার সামনে এক মেয়ে তার উপর নির্যাতনের ঘটনা বলতে থাকে। দৃশ্যটি আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি লেগেছে আমার কাছে।

মূলত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার অন্তরালের গল্প খুঁজতে যান সাংবাদিক আফসানা। সেই গল্প খুঁজতে গিয়ে তিনিই হন তাকদীর সিরিজের তাকদীরের গল্প। লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে পাওয়া লাশ নিয়ে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা।  ঘটনার অন্তরালে থাকে বিভিন্ন চরিত্রের ভূমিকা।

তাকদীরের আট পর্বের আটটি নাম বেশ চমকপ্রদ ছিল। এই সিরিজের শুটিং লোকেশন বেশ ভালো ছিল। কালার গ্রেড উন্নতমানের বলা যেতে পারে। তাকদীরের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার  বেশ উল্লেখযোগ্য। যদিও আমার ওয়েব সিরিজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই, তবুও বলছি, পরিচালক চাইলে বোধহয় একটি গান যোগ করতে পারতেন। গানটি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবেও ব্যবহার করা যেত।

আমি অনেকের মুখেই শুনেছি বর্তমানে ওয়েব সিরিজগুলো অনেক মৌলিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়ে থাকে। আমি ধরে নিচ্ছি তাকদীর সিরিজের কাহিনীও সম্পূর্ণ মৌলিক। আমার প্রত্যাশা, তাহলে এই মৌলিক কাহিনী নিয়ে একটি চমৎকার সিনেমাই নির্মাণ করা যেত।

শেষ দৃশ্য দেখার পর অনেকেই মনে করছেন যে তাকদীরের আরও গল্প আসবে খুব শিগগিরই। আমি নিশ্চিত দর্শকরা অপেক্ষায় আছেন, বাকিটা নির্ভর করছে সিরিজটির প্রযোজনা সংস্থার উপর।