Published : 17 Jul 2011, 03:19 PM
একটু খেয়াল করে দেখুন তো, এই মুহূর্তে আপনার শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কি না? তার হিসেব করাটা সহজ। মানুষ তার নিজের সম্পর্কে খুব বেশিই অবগত থাকে। পৃথিবীতে আর যাই হোক ভবিষ্যৎ দেখার যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি এখনও। যে কেউই যে কোন কিছু নিয়েই ভবিষ্যদ্বাণী করুক না কেন। সে ধারনা হয়ত দিবে আপনাকে। একশত ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। ঠিক তেমনি, পৃথিবীতে যারাই প্রতিবন্ধী হয়েছেন তারা কেউই তাদের এই শারীরিক অক্ষমতা নিজে ইচ্ছে করে নিয়ে আসেনি। যে কোন দুর্ঘটনা অথবা রোগ এর জন্যই হয়ত আজ তারা প্রতিবন্ধী। যারা আমার আপনার মতোই একসময় সক্ষম ছিলেন, সব কাজ নিজেই করতেন। প্রথমত আমরা এইভাবে ভাবি না। আর তার ফলেই উন্নত বিশ্বে তো বটেই আমাদের মতন উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান এর বিচারে আজ প্রতিবন্ধীদের অবস্থা কোন দিক দিয়েই বন্ধু বৎসল না।
আশার কথা, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ নং ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম-সুযোগ, সম-অংশগ্রহণ ও সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে। খোদ সংবিধানে যেখানে তাদের অধিকারের কথা বলা হয়। সেখানে আমরা কি তাদেরকে এই সুযোগ পেতে সহায়তা করি? করি না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করতে পারে না। কেবল মাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা তাদের অনুকূলে নয় বলে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় আমাদের দেশে। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগন। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে যারা হুইল চেয়ার অথবা অন্যান্য সহায়ক উপকরণ ব্যাবহার করে চলাফেরা করন। সবচেয়ে বিপাকে পরেন তারা। এই সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা আমরা ভাবি না। তাদের জন্য নেই কোন যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা। আমাদের সকলের জানা দরকার দেশের নাগরিক হিসেবে আমার আপনার মতোই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণের দিক নির্দেশনা এবং তাদের অধিকার আছে। যা চলমান আইন হিসেবেও আপনি বলতে পারেন। ২০০১ সালে গৃহীত প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইনে তফসিল ধারা ২(খ) এবং ৬(২) দ্র:)- এর 'ছ' তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতের সুবিধা সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে-
১)প্রতিবন্ধীদের যাতায়াত ও যোগাযোগ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ কল্পে সরকারী, সংবিধিবদ্ধ ও বেসরকারি সংস্থার ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা এবং যানবাহনে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা।
২)রেলগাড়ি, নৌযান, বাস টার্মিনাল এবং বিশ্রামাগারসহ যে সকল স্থানে সাধারণ ব্যবহার্য শৌচাগার নির্মাণের বিধান রহিয়াছে সে সকল যান ও স্থানে যাহাতে প্রতিবন্ধীরা সুবিধাজনকভাবে ব্যাবহারের সুযোগ লাভ করে তাহার ব্যবস্থা করা।
৩)দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চলাচলের শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা পারাপারের স্থানে শব্দ সংকেতের ব্যবস্থা করা।
৪)প্রতিবন্ধীদের নিরাপদ ও চলাচলে সহায়তা প্রদান কল্পে উপযুক্ত প্রতীক উদ্ভাবন করা।
৫)হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রযোজ্য স্থানে ঢালু ও বাঁকানো রাস্তা, সিঁড়ি ও র্যাম্প নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৬)পরিচয়পত্র বহনকারী প্রতিবন্ধী ও তাহার একজন সহযোগী সঙ্গীর জন্য বাস, ট্রেন, বিমান ও জলযানে রেয়াতী হারে ভাড়া নির্ধারণসহ বহনযোগ্য মালামাল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বাস মালিক গন তাদের নিজস্ব মুনাফা বাড়ানোর জন্য নিতে চান না একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে। সে মুহূর্তে আমাদের কি করা উচিত না –প্রতিবাদ করা? কিন্তু আমরা তা কি করি? অনেক সময়ই নিজের জায়গাটা ছেড়ে কি দেই? পাবলিক যানবাহনের মালিক গনের সস্তা মুনাফার কারণে এবং আমাদের নিজস্ব বিরক্তির কারণে মানসিক দৈন্যতার কারণে এই সব অনাচার এবং অব্যবস্থাপনা ঘটেই চলেছে প্রতিনিয়ত।
আমি আপনিও হতে পারি যে কোন মুহূর্তে একজন প্রতিবন্ধী। শুধুমাত্র এই সঠিক মানসিকতা এবং ভাবনা টা মনের মধ্যে গেঁথে রাখলেই দেখবেন আপনি নিজেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায়। সহায়তা করছেন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ইচ্ছে এবং স্বপ্ন পূরণের সাক্ষী হয়ে। একজন ষ্টিফেন হকিংস আমরা যে হারাচ্ছি না প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করে। তাই বা কে বলতে পারেন। ফাল্গুনী এবং সাবিরাগন আমার আপনার চেয়েও ঢের মেধাবী, তা ভুলে গেলে চলবে না।
তাই আসুন, পথিমধ্যে কোণ শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার রক্ষায়। তাদের উপর অন্যায় এর বিরুদ্ধে বলে উঠি, প্রতিবাদ করে বলি – এ অন্যায়। সুস্থ-সবল মানুষদের কাছ থেকে এতটুকুন সহযোগিতাই পারে প্রতিবন্ধীদের প্রতিকূলতাকে জয় করার দ্বার আরও বেগবান ভাবে উন্মুক্ত করতে।
( প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় নিবেদিত বি-স্ক্যান এর জন্মদিনে ,এই ক্ষুদ্র সচেতনতামুলক লিখাটি উৎসর্গ করলাম। একজন সাধারন মানূষের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বি-স্ক্যান এর জন্য। )