বর্ধিত দুই দিনের বইমেলায় কী থাকছে

এ দুই দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। তবে শিশুপ্রহর থাকবে না

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2024, 06:38 PM
Updated : 29 Feb 2024, 06:38 PM

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পর্দা নামার কথা একুশে বইমেলার। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি থেকে সমাপনি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র বিতরণও করা হয়েছিল, তখনই এল বইমেলার সময় বাড়ানোর খবর। 

প্রকাশকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় বইমেলার সময় বেড়েছে দুই দিন। এতে শুক্র ও শনিবারও চলবে বইমেলা। তবে কী থাকবে এ দুই দিন? 

এ দুই দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। তবে শিশুপ্রহর থাকবে না। সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে ওই সময় থেকে। 

মেলার আয়োজন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দুই দিন মূলত বই বিক্রিই মেলার মুখ্য বিষয় থাকবে প্রকাশকদের। মেলার অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা তেমন থাকছে না।

মেলা উপলক্ষে প্রথম দিন থেকে মূল মঞ্চে প্রতিদিনই ছিল আলোচনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লেখক বলছি মঞ্চে থাকতো বই নিয়ে কথোপকথন। 

এছাড়া এবার মেলার মধ্যভাগে এসে 'বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন' নামে আরেকটি নতুন মঞ্চও চালু করা হয়। গত সপ্তাহজুড়ে এই মঞ্চেও বই নিয়ে আলাপ-অনুষ্ঠান হয়েছে। তবে বর্ধিত দুই দিন এই মঞ্চগুলো থাকবে নিরব। কারণ মেলার আয়োজন প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনায় যে অনুষ্ঠান সাজানো ছিল তার অনানুষ্ঠানিক সমাপনি হয়ে গেছে। 

বর্ধিত দুই দিনের আয়োজনে কী থাকবে? জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা তো সমাপন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন হুট করেই মেলা বাড়ানোর কারণে আমাদের আয়োজনে আর নতুন করে কিছুই হচ্ছে না। ২৯ ফেব্রুয়ারি যে সমাপন আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কথা ছিল, সেটি ২ মার্চ হবে। 

“এছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দিক থেকে নেই। প্রতিদিনের রুটিন যে কাজ সেগুলো করে যাব।"

ক্লান্তি ভর করেছে

প্রকাশকরা খুশি হলেও বইমেলার মেয়াদ বাড়ানোর খবরে খুব একটা খুশি হতে পারেননি বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও। মেলার বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলের বিক্রয়কর্মীদের অনেকেও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। 

তাদের ভাষ্য, ২৯ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হবে এবং সেভাবে অনেকেই সেভাবে তাদের কাজের পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। কিন্তু হুট করে মেলার সময় বাড়ার কারণে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। 

একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, মেলার অন্তত দুই মাস আগে থেকেই এই মেলা নিয়ে তাদের কাজে ব্যস্ত হতে হয়। মেলার শেষ সপ্তাহে এসে তাদের সবার মাঝে ক্লান্তি ভর করে। এখন হুট করে দুই দিন বাড়ার কারণে তারা কেউ খুশি হতে পারছেন না।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো সত্য, আমাদের কর্মীদের অনেকেই খুব ক্লান্ত। কারণ টানা দেড়-দু’মাস ধরে বইমেলার কাজ নিয়েই আমরা সবাই ব্যস্ত আছি। মেলার পর অনেকের নানা রকম পরিকল্পনা হয়তো রয়েছে। কিন্তু যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেলা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সবাই সক্রিয় আছি।” 

অন্যদিকে লেখক-প্রকাশকদের অনেকে মেলা বাড়ানোর খবরে মনে করছেন, এই দুই দিন মানুষের ঢল নামবে মেলায়। আনন্দে ভাসবে মেলা প্রাঙ্গণ। 

বাতিঘর এর স্বত্ত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "দুই দিন বাড়ার কারণে যারা নানা কারণে সময় করে উঠতে পারেননি মেলায় আসার, তারা আসতে পারবেন। এটা ভালো হয়েছে। দুই ছুটির দিনে লেখক-পাঠক এবং বইপ্রেমীদের আড্ডায় মুখর হবে মেলা।"

বইমেলা স্থানান্তর মেনে নেবে না প্রকাশকরা 

বইমেলাকে বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অন্যত্র সরিয়ে মেনে না নেওয়ার কথা বলেছে প্রকাশকদের সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। 

বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের প্যাভিলিয়নে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলা হয়।

এতে লিখিত বক্তব্য দেন বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল। 

শ্যামল পাল অভিযোগ করে বলেন, “আমরা নানান সূত্রে জেনেছি যে, অত্র অঞ্চল থেকে একুশে বইমেলাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে এবং এর সাথে মহান স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত রয়েছে। যাতে বাঙালির সংস্কৃতি চর্চার এই শক্তিশালি কর্মকাণ্ডটিকে নস্যাত করে দেওয়া যায়। 

“আমরা এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানাতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।“

তার ভাষ্য, “আমরা মনে করি এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে বাস্তবায়ন করা হলে তা হবে এই মহান বইমেলাকে হত্যা করার সামিল। 

“এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে অতি সহজেই বাঙালির গৌরবের সব ইতিহাসকে অনেকাংশে ম্লান করে দেওয়া যাবে এবং তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সংস্কৃতিচর্চার আলোকবিস্তারিত অগ্নিশিখাটি এবং সেটা হবে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, গবেষক, লেখক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষকে সাংস্কৃতিক এবং আর্থিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতি করার সামিল।“ 

এ কারণে একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যাবে না বলে জোরালো দাবি তোলেন তিনি। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি অন্য প্রকাশকের স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক ও আকাশ প্রকাশনীর প্রকাশক আলমগীর শিকদার লোটন, বইমেলা স্টান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব নেসার উদ্দিন আয়ুব, অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথ। 

বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার ২৯তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।

মেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, বৃহস্পতিবার মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই এসেছে ১২৭টি। মেলার ২৯তম দিনে ৩ হাজার ৩৮৩টি। 

মেলায় সৌম্য প্রকাশনী থেকে এসেছে যতীন সরকারের ‘আমাদের চিন্তাচর্চার দিক-দিগন্ত’; বাংলা একাডেমি এনেছে সাজ্জাদ আরেফিনের ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা পরিচয়’। 

এছাড়া সুকুমার বিশ্বাসের ‘পূর্ববঙ্গের ভাষা আন্দোলন: সংবাদপত্রের ভূমিকা ও ইতিহাস’ (দুই খণ্ডে) এনেছে বোধি (তক্ষশিলার প্রকাশনা বিভাগ, স্টল নং: ৬০)। 

Also Read: বইমেলা তাহলে কোথায় যাবে?

গবেষণাধর্মী এ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত মোট তিনটি অধ্যায়ে পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষা আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি এ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত এক গুচ্ছ চিঠিপত্র, উর্দু ভাষার পক্ষে জোরালো সওয়াল এ সবই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

দ্বিতীয় খণ্ডে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে ১৯৫২ সাল ও বায়ান্ন উত্তরকাল। বইটির মুদ্রিত মূল্য ১৭০০ টাকা। ২৫% ছাড় দিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৭৫ টাকা। 

এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন, পুঁথি গবেষক জালাল খান ইউসুফী, কথাসাহিত্যিক মাহমুদুন নবী রনি ও কবি রনি রেজা। 

মেলা পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, শুক্রবার বইমেলার ৩০তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।