চক্রটি বিভিন্নজনের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
Published : 14 Mar 2024, 07:31 PM
লাগেজ ভর্তি ডলার পাওয়ার লোভে পড়ে প্রতারকের হাতে ৭১ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন সুমন আল রেজা নামের এক ব্যাক্তি। পরে বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সুমনের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি বলছে, কেবল সুমন নয়, অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ২৮ বছর বয়সী সোহেল আহমেদ অপু এ চক্রটির দলনেতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ডিসেম্বরে করা সুমনের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
“মামলার সূত্রে গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে আকাশ (২৩) ও ইব্রাহিম (৩০) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর জানা যায়, তাদের দলনেতা সোহেল আহমেদ অপু। পরে অপুকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে দেড় মাসেও অধিক সময় পর মিরপুরের পাইকপাড়ায় তার সন্ধান মেলে।”
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, অপু নেতৃত্বাধীন চক্রটি প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
“অপু অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করাতে পারেন। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই অপুর কথায় বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ লাখ লাখ টাকা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেয়।”
এই চক্রের হোতা অপু হলেও পেছনে কেউ আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী।
টাকা জমা হওয়ার পরপরই চক্রটি টাকা তুলে ফেলত জানিয়ে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিললেও উল্লেখ করার মতো কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
পরিচয় আর প্রতারণা কৌশল
উত্তরা পশ্চিম থানায় করা মামলার বাদী সুমনের সঙ্গে ফেইসবুকে প্রতারক অপুর পরিচয় হয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিটি ন্যাশনাল ব্যাংক অব ফ্লোরিডা’র কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অপু ফাঁদে ফেলেন সুমনকে। অপু বলেন, ওই ব্যাংকে একজন গ্রাহকের ৬০ লাখ ডলার জমা আছে। কিন্তু গ্রাহক কোনো ওয়ারিশ না রেখেই মারা গেছেন।
ওই গ্রাহকের ওয়ারিশ সাজিয়ে ৬০ লাখ ডলার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুমনকে বলা হয়, ব্যাংক থেকে ডলার তোলার পর দুইজনের মধ্যে সমান ভাগ হবে।
অপুর এ কথায় বিশ্বাস করে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন সুমন। এরমধ্যে ওয়ারিশ বানানোসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন অপু।
সেই অনুযায়ী অপুর দেওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাকের একটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে সুমন। কয়েকদিন পর সুমনের বেশ কিছু তথ্য নিয়ে ওই গ্রাহকের ওয়ারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন অপু।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল ট্যাক্স’ হিসাবে সাড়ে ৬১ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৫৫ হাজার ডলার দাবি করেন অপু। সুমন এই টাকাও নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন।
তারপর নির্ধারিত সময় পেরোলেও সেই লাগেজ যেমন মেলেনি, অপুও যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন সুমন। এরপরই তিনি মামলা করেন।