পিএসসি: প্রশ্নফাঁসে ১০ বছর সাজার বিধান রেখে সংসদে বিল

১৯৭৭ সালের বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স রহিত করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2022, 04:11 PM
Updated : 31 Oct 2022, 04:11 PM

সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাব তোলা হয়েছে সংসদে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৭ রহিত করে নতুন এই আইন করতে সোমবার ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বিল ২০২২’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

পরে বিলটি পরীক্ষা করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এই বিল নিয়ে আপত্তি তুলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, “সব ধরনের চাকরি ও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। দক্ষ জনবল নিয়োগর বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য-উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ার পর পুলিশি যাচাইয়ের নামে ভিন্নমতের প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিকারের বিষয়ে আইনে কিছু নেই।”

পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে অভিন্ন একটি আইন করার দাবি জানান তিনি।

বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, “মেডিকেল, এসএসসি, এইচএসসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। সম্প্রতি তথ্য সচিবকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাকে কেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন কথা গণমাধ্যমে এসেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হলে দলীয় বিবেচনা বাদ দিতে হবে।”

হারুনের বক্তব্যের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, “অতীতে প্রশ্ন ফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ২০০১–২০০৬ সালে বেশি ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

পরে কণ্ঠভোটে হারুনের আপত্তি নাকচ হয়ে যায়।

বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্সের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এমনভাবে বহাল থাকবে যেন এটি এই আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সভাপতি, অন্তত ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে।

কোনো বিভাগীয় অফিস, জেলা অফিস বা অধস্তন অফিসের কোনো পদ– যেখানে ওই অফিসের প্রধান বা অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োগ দেওআ হয়, সেরকম পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক হবে না।

এছাড়া কোনো আইন দিয়ে কমিশনের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে– এমন কোনো চাকরি বা পদে নিয়োগের ক্ষত্রেও পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

বিলে বলা হয়েছে, কমিশন প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও শর্তাবলী নির্ধারণ করতে পারবে।

কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয় পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে ‘মিথ্যা ধারণাদায়ক’ কোনও প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যে কোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করলে তা হবে দণ্ডণীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য হবে।

কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে লিখিত হয়নি- এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে সেজন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।

কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা সেখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী জানান, “সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) আইন কার্যকর আছে।

“এ আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এভং পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

আরও বিল

সংসদে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন বোর্ডগুলো বাতিলে সংসদে বিল উত্থাপন হয়েছে।

সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উন্নয়ন বোর্ড আইনসমুহ (রহিতকরন) বিল ২০২২ উত্থাপন করলে তা আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এই বিল পাস হলে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড,  ঢাকা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম জেলা উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেট উন্নয়ন বোর্ড এবং উন্নয়ন বোর্ড লজ (রহিতকরণ) রহিত হবে।

সংসদের গত অধিবেশনে উত্থাপিত সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২২ প্রত্যাহারও হয়েছে।

সোমবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৯৩ বিধি মোতাবেক বিলটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। পরে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়।

গত ২৯ আগস্ট জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন। পরে তা সংসদীয় কমিটিতে পাঠনো হয়। তবে বিলটি প্রত্যাহারের কোনো কারণ বলেননি প্রতিমন্ত্রী। 

সরকারি চাকরি আইনের একাধিক ধারা নিয়ে বর্তমানে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান।