বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বললেন চীনা রাষ্ট্রদূত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 05:53 PM
Updated : 26 Sept 2022, 05:53 PM

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা রাষ্ট্রদূত, সেখানেই তা আলোচনায় আসে।

পরে লি জিমিং সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এটাও আলোচনায় এসেছে।”

মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠনের সংঘাতের মধ্যে গত অগাস্ট মাসের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের ভেতরে গোলা এসে পড়ার ঘটনা ঘটছে।

এতে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর বান্দরবান সীমান্তের বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতকে ঢাকায় কয়েকদফা তলব করে প্রতিবাদ জানানো হলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়ে গত সোমবার ঢাকায় আসিয়ান জোটের মিশন প্রধানদের ডেকে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরদিন মঙ্গলবার ‘ব্রিফ’ করা হয় আসিয়ান জোটের বাইরের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের। সেখানে প্রায় সব দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও চীনের রাষ্ট্রদূত বা কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

সোমবার রাষ্ট্রদূত জিমিংয়ের সাথে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব।

বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত অনেক ইস্যু এবং দুদেশের মধ্যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

আলোচনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলম বলেন, “আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“ওই দিন তিনি মিটিংয়ে ছিলেন না। আমরা সবাইকে অবহিত করেছি। বেইজিং এ বিষয়ে নে পি দোর সঙ্গে আলোচনা করবে, এটা বলেছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।”

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে খুরশেদ আলম বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে চায়না আগে থেকে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় ছিল। এটা যেন ত্বরান্বিত হয় সে ব্যাপারে বলেছি। ত্রিপক্ষীয় ইস্যু আগে। আমাদের ইস্যু তো সাম্প্রতিক ইস্যু না।

“মূলত হল, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত দ্রুত শুরু করা যায়। আমরা তো এখনও শুরু করতে পারিনি। এ ব্যাপারে তারা যেহেতু আগে একটা ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল, সেই ইনিশিয়েটিভের ব্যাপারে আমরা অনুরোধ করেছি, বলেছি আপনারা ইনিশিয়েটিভ নেন।”

তিনি আরও বলেন, “এখানকার পরিস্থিতি ভালো না। যাতে প্রত্যাবাসনটা শুরু হয় এ ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তারা (চীন) রাখাইনে ঘরবাড়ি বানিয়েছে, যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে গেলে সেখানে থাকতে পারবে। ওই জায়গার সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির ওপর এটা নির্ভর করছে।”

সীমান্তে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে প্রত্যাবাসন সম্ভব কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, যে জায়গায় নিয়ে যাবে সেখানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না।

আগের ব্রিফিংয়ে চীনের না থাকার কোনো কারণ জানা গেছে কিনা, এমন প্রশ্নে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “অবশ্যই কারণ ছিল। আমরা তো একটা বন্ধুপ্রতীম দেশের থেকে ওভাবে ব্যাখ্যা চাইনি। ওনাদের সমস্যা ছিল।”

সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে চীনের আশ্বাসে ঢাকা আশ্বস্ত হতে পারছে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চীনের নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করি কি না করি, এতে কিছু আসে যায় না।

“কিন্তু চীন যেহেতু আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ আমরা মনে করি, তার কাছে এটা বললে চীন যথাস্থানে পৌঁছে দেবে। যতটুকু সম্ভব তাদের লেভারেজ আছে।”