পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ঘটনা উদ্ঘাটনের দাবি

বিচার পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 09:38 AM
Updated : 25 Feb 2023, 09:38 AM

পিলখানায় ১৪ বছর আগে যে সেনা কর্মকর্তারা নিহত হয়েছিলেন, সেই বিদ্রোহের পেছনের ঘটনা উদ্ঘাটন চাইছেন তাদের স্বজনরা।

রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের চতুর্দশ বার্ষিকীতে শনিবার ঢাকার বনানীর সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নিজেদের এই চাওয়ার কথা জানান তারা।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সদর দপ্তরে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাণ হারান ৭৪ জন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। হত্যামামলায় বিচারিক আদালত ২০১৩ সালে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। বিস্ফোরক মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি।

২০১৭ সালে হাই কোর্ট হত্যামামলার আপিলে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কী, তার কারণ খুঁজতেও সরকারকে পরামর্শ দেয় উচ্চ আদালত।

Also Read: পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিচারের শেষ দেখা এখনও বাকি

Also Read: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কী, কারণ খুঁজতে পরামর্শ হাই কোর্টের

আদালতের সেই পরামর্শ উপেক্ষিত থাকার কথা শনিবার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বলেন স্বজনহারা কয়েকজন।

নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমানের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো একটা জুডিশিয়ারি ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করা হয় আন্ডার রিটায়ার্ড সুপ্রিম কোর্ট জাস্টিস। যেই জুডিশিয়ারি ইনুকয়ারি কমিশনটা এটা তদন্ত করে দেখবে যে, পর্দার আড়ালে কী ছিল?

“সেটা যদি না হয়, তাহলে কিন্তু ইভেনচুয়ালি যদি ফাঁসিও হয়ে যায়, তাহলেই বা কী? এটা তো স্বাভাবিক- যে কোনো অপরাধীর তো ফাঁসি হবে। এটাতে খুশি হওয়ার কিছু নাই। পর্দার আড়ালে যারা রয়ে গেল, তাদেরকে কিন্তু আমরা খুঁজে পেলাম না।”

কুদরতের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, “তাকে (ছেলে) হত্যার কারণ কী, জানি না। তবে তার মেধাই বোধহয় কাল হয়েছিল। আজও বিচার পাইনি। এটা আমাদের বেদনার ব্যাপার, কষ্টের ব্যাপার।

“আমি ৮৭ বছর বয়সে এই যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু কুদরতের মা তিন বছরের বেশি আর বাঁচতে পারেনি। বিচার (শেষ) কবে হবে জানি না। জানি না জীবদ্দশায় দেখতে পাব কি না।”

মেজর মোহাম্মদ মাকসুম-উল হাকিমের বয়োজ্যেষ্ঠ শ্বশুর বলেন, “সরকার ডাকে আমরা আসি। শোকসভা করে চলে যাই। ডেথ রেফারেন্স যে আটকে আছে, এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ হলে আমরা রায়টা দেখতে পারবে। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছি।”

নিহত মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বিচার সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আমি বিচার পাব না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার হবে না, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার সম্ভব না।”

কেন এরকম আশঙ্কা করছেন প্রশ্ন করা হলে রাকিন বলেন, “কিছু মানুষের লজ্জা নাই। মানুষের তো লজ্জা থাকে।”

একসঙ্গে মা ও বাবাকে হারানো রাকিন সংবাদকর্মীদের বলেন,“আপনারা সত্য প্রচার করতে পারবেন না, বলে লাভ নাই। অযথা সময় করছেন। আমি যা বলব, তা প্রচার করতে পারবেন না।”

শাকিল আহমেদের ছোট বোন রুবিনা নেসা বিষন্ন কণ্ঠে বলেন, “দীর্ঘ দিন হয়ে গেল। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে আছে। আশা করছি, কিছু একটা বিচার পাব। আমরা পরিবারের সবাই সেই অপেক্ষায় আছি।”

নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরা বনানী সামরিক কবরস্থানে স্বজনের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, অশ্রুনয়নে প্রার্থনা করেন। এসময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন কেউ কেউ।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার্ঘ্য

দিনের শুরুতে সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের স্মৃতি স্তম্ভে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দেন।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্দুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, নৈতিক সমাজের চেয়ারম্যান আ ম সা আমিন ফুল দেন স্মৃতি স্তম্ভে।

রিটায়ার্ড আমর্ড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে প্রয়াত সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।