দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিকে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে রাজি নন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তার ভাষায়, অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিযোগিতায় থাকার সক্ষমতা ভারতেরও রয়েছে।
মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের মুম্বাই শাখার আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “চীনও প্রতিবেশী দেশ। প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অংশ হিসেবে তারা অন্য দেশকে প্রভাবিত করে থাকে।
“আমি মনে করি না চীনের বিষয়ে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত। আমি মনে করি আমাদের বলা উচিত- ঠিক আছে, বৈশ্বিক রাজনীতি প্রতিযোগিতামূলক খেলা, তুমি তোমার সর্বোচ্চটা দাও, আমি আমার সর্বোচ্চটা দেব।”
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের ঘনিষ্ঠতা ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির ব্যর্থতার ইঙ্গিত কিনা এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের কৌশলগত বিস্তারকে ভারত কীভাবে মোকাবেলা করবে, দর্শক সারি থেকে আসা এমন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন জয়শঙ্কর।
জবাবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে পাশে দাঁড়ানো, নেপাল থেকে ভারতে বিদ্যুৎ আমদানি এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জন্য বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের উদাহরণ টানেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আপনাদের জন্য আমার প্রথম পরামর্শ হবে, পরবর্তী ছুটিতে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে যান, সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশুন; জিজ্ঞেস করুন তারা ভারতের ব্যাপারে কী ভাবে?
“আমি বলতে পারি, যে উত্তর আপনি পাবেন, তাতে নিজেকে নতুন উচ্চতায় আবিষ্কার করবেন।”
জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের মধ্যে গোটা বিশ্ব যখন শ্রীলঙ্কার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তখন ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে কথা তুলে ধরেন জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, “ভারত একমাত্র দেশ যারা এগিয়ে এসেছিল এবং সেটা ছোট পরিসরে নয়। বাস্তবে আমরা শ্রীলঙ্কাকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।”
ওই সময় দীর্ঘ দিন দেনদরবার করে শ্রীলঙ্কা যে আইএমএফের কাছ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের কম পেয়েছিল, সে কথাও বলে জয়শঙ্কর।
তার ভাষায়, শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হিসাবে চীন তার সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে, আর এমনটাই হওয়ার কথা।
“এর জবাব চীনের বিষয়ে অভিযোগ করব না, বরং বলব, ঠিক আছে, তুমি এটা করছ, আমাকে এর চেয়ে ভালোটা করতে দাও।”
শ্রীলঙ্কায় বেড়ানো হলে তারপর নেপালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নেপাল বুঝতে পেরেছে, ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়টা তাদের জন্য বিরাট লাভজনক।”
এরপর বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সড়ক ও রেল যোগাযোগও এখন বেশ সচল হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মত নিজেদের ভেতর দিয়ে যাওয়ার ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ ভারতকে দিয়েছে বাংলাদেশ।
“আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এর বিশাল প্রভাব রয়েছে। তা না হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শিলিগুড়ি করিডোর ধরে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পূর্বাঞ্চলের বন্দরে আসা লাগত। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন তারা চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারছে। এর ফলে ভারতে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি পাল্টে যাবে।”
এসব উদাহরণ টেনে জয়শঙ্কর বলেন, “এটা ঠিক, এখানে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে এটাকে (প্রতিবেশী প্রথম নীতির) ব্যর্থতা বললে সেটা হবে ভুল। আমি বলব, আজকের ভারতকে প্রতিযোগিতায় ভয় পেলে চলবে না। প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানাতে হবে এবং বলতে হবে, আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা আছে।”