২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে খুন করা হয় আড়াই বছরের ইসরাত জাহান রিয়াকে।
Published : 21 Mar 2024, 07:25 PM
এক যুগ আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আড়াই বছরের মেয়েকে খুনের দায়ে এক নারী এবং তার প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত রোজিনা আক্তার এবং সুলতান মাহমুদকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
সুলতান মাহমুদকে এদিন রায়ের জন্য কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। অপর আসামি রোজিনা আক্তার পলাতক রয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আড়াই বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান রিয়াকে নিয়ে রোজিনা আক্তার ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে গাইনি ওয়ার্ডে যান ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তারের রুমের সামনে থাকা আয়া সেলিনা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে বাধা দেন। পরে রিয়াকে তিনি আয়ার কাছে রেখে ডাক্তারের কক্ষে যান।
২০ মিনিট পর রোজিনা আক্তার ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে আয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করেন রিয়া কোথায়। আয়া তখন রিয়াকে ‘দেখেননি’ বলে জানান।
রোজিনা তার মেয়েকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে অন্য এক রোগী তাকে জানান, কালো খাটো কোট পরিহিত এক ব্যক্তি তার মেয়েকে বাবা পরিচয় দিয়ে নিয়ে গেছে। নিয়ে যাওয়ার সময় তার মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে।
রোজিনা আক্তার তখন বিষয়টি তার স্বামী নুরুল ইসলামকে জানান। নুরুল ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে মেয়েকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে হাসপাতালের নিউক্লিয়ার আল্ট্রাসাউন্ড সেন্টারের তৃতীয় তলায় মেয়ের লাশ পান তিনি।
এ ঘটনায় ৫ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন রিয়ার বাবা নুরুল ইসলাম। তদন্তে নেমে পুলিশ সুলতান মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, রোজিনার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ‘বাধা হয়ে’ দাঁড়ানোয় রিয়াকে তিনি শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর রোজিনা ও সুলতান মাহমুদকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তপন চন্দ্র সাহা। পরের বছরের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার বিচার চলাকালে বাদীপক্ষে ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি ফারুক-উজ্জামান ভূইয়া (টিপু)। আসামি সুলতানের পক্ষে ছিলেন জাকির হোসাইন।