“বিশাল নথিটির সব কিছু আমরা দেখে বিজ্ঞ সিএমএম সাহেবের কাছে পাঠাব সামনের সপ্তাহে; নথিটি রেডি হচ্ছে,” বলছেন আদালত পুলিশের এক কর্মকর্তা।
Published : 28 Mar 2024, 09:44 PM
রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পাঁচ বছর পার হলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি।
মামলাটিতে আটজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই; মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হলেও এখনো আদেশ হয়নি।
সবশেষ গত ১২ মার্চ আলোচিত এই মামলার তারিখ ছিল। সেদিন ঢাকা মহানগর হাকিম রশিদুল আলম মামলার নথি মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে পাঠানোর আদেশ দেন। মুখ্য মহানগর হাকিম এখন মামলাটির পরবর্তী বিচারের জন্য আদেশ দেবেন।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, তিনি কিছু জানেন না।
তবে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশাল আয়তনের নথিটির সব কিছু আমরা দেখে বিজ্ঞ সিএমএম সাহেবের কাছে পাঠাব সামনের সপ্তাহে। নথিটি রেডি হচ্ছে।”
অপরদিকে পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু সাঈদ বলেন, “মামলার চার্জশিটে উল্লেখ আছে ১৫ তলা ভবনের রাজউক যে অনুমোদন দিয়েছেন তা সঠিক আছে। এটা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আর যে ব্যক্তি ল্যান্ডওনার, তো ১৫ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত রূপায়ন গ্রুপকে করতে দিয়ে দেয়। রূপায়ন গ্রুপ রাজউক থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত যে পারমিশন আনছে এটাও সঠিক আছে। সেটাও চার্জশিটে উল্লেখ আছে।
“এখানে যে ল্যান্ডওনার তার তো কোনো অপরাধ নাই। তিনি তো সঠিকভাবে স্যাংশন এনে বা পারমিশন এনে করেছে। পরবর্তীতে ৩ তলা এক্সটেনশন করার জন্য রূপায়নকে দেওয়া হয়। এখানে জমির মালিকের দায় নাই। আর তিনি তো মারা গেছেন। আর রূপায়ন গ্রুপ তো সঠিকভাবে পারমিশন এনে করেছে। পরবর্তীতে তা হ্যান্ডওভার করেছে। হ্যান্ডওভারের পর তার তো আর কোনো দায় থাকে না। পরবর্তীতে কী করতে হবে এটা ডেভেলপারের আর থাকে না। এ কারণে মুকুল সাহেবকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে।
“আর বাকিদের মধ্যে ওয়ারদা (ওয়ারদা ইকবাল) নামে একজন মহিলা আছেন। কমিটির একজন সদস্য হিসেবে তার নাম আছে এটা তিনি জানেনও না। কোনো মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাইনি। আর ওয়ারদা দেশে থাকেন না।”
এই মামলা দাঁড় করাতে রাজউকের কর্মকর্তাদের মামলায় যুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী আবু সাঈদ।
ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “এই মামলা পুনরায় তদন্ত হওয়া উচিত। কেন? যদি এটাকে স্ট্যান্ড করতে হয় তাহলে রাউজকের লোককে মামলায় ইনভলব করতে হবে। এটা হল ফাইনাল কথা। রাজউকের অনেক লোক, উচ্চপদস্থ যারা অনুমোদন দিয়েছে, তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এটা সঠিকভাবে তদন্তই হয়নি। তদন্তে আগেও যা দিছে পরেও তাই দিছে। তেমন কোনো রদবদল হয়নি।
“মুকুল সাহেব… এখানে তার আর কোনো মাথাব্যথা নাই। ফারুক সাহেব তো ল্যান্ড দিয়েই দিছেন। আর ওয়ারদা তো আসামিই হয় না। আশা করছি, আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন। হয়রানি থেকে মুক্ত হবেন।”
মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- এফআর টাওয়ারের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তানভিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এ এ মনিরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনুর রহমান, সদস্য কাজী মাহমুদুন নবী, রফিকুল ইসলাম, ওয়ারদা ইকবাল ও ভবনটির সপ্তম তলার মালিক সেলিম উল্লাহ।
এদের মধ্যে আসামি ফারুক, তানভিরুল ও আমিনুর জামিনে এবং অন্যরা পলাতক আছেন বলে জানান বনানী থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম।
২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর ৩২ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। জীবন বাঁচাতে বিভিন্নভাবে বাণিজ্যিক এ ভবন থেকে নামার সময় দুর্ঘটনা ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক ব্যক্তি।
ওই ঘটনায় ৩০ মার্চ বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত হয়নি মন্তব্য করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আটজনকে অভিযুক্ত করে এ বছর ২২ জানুয়ারি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন, যেখানে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, রূপায়ন গ্রুপ ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার পাম্প, জকি পাম্প, ফায়ার হাইড্রেন্ট, এবিসি ফায়ার এক্সটিংগুইসার, হিট ডিটেকটরসহ মোট ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ২৩তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে। নকশা অনুমোদন পরবর্তী সময়েও রাজউক এখানে মনিটরিং করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানি পজেশন হস্তান্তর করায় ভবনটির সুপারভাইজ ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব কোম্পানির ওপর বর্তায় না। কাজেই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে নির্মাণ কোম্পানির কোনো অবহেলা পরিলক্ষিত হয় না।
পুরনো খবর-