ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ের দায়িত্বে জননিরাপত্তা সচিব

“অবৈধ অস্ত্র, নাশকতামূলক কাজ, ধর্মীয় উসকানি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার জন্য একটু প্রবণতা কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে,” বলেন মোজাম্মেল হক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2023, 11:00 AM
Updated : 18 Oct 2023, 11:00 AM

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয় করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ক-র্মকাণ্ডে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার প্রবণতা’ লক্ষ্য করায় জননিরাপত্তা সচিবকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।

সচিবালয়ে বুধবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মোজাম্মেল হক বলেন, “অবৈধ অস্ত্র, নাশকতামূলক কাজ, ধর্মীয় উসকানি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার জন্য একটু প্রবণতা কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

“সে ব্যাপারে সব সময় যাতে সতর্ক থাকা যায়, এ রকম কোনো অঘটন যাতে ঘটাতে না পারে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সব সময় সচেতন থাকতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।”

মোজাম্মেল হক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয় যাতে থাকে সেজন্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাহিনীগুলোর এ সমস্ত কাজ উনি সমন্বয় করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরাও সেখানে থাকবেন।”

“আইনশৃঙ্খলা অবনতি যদি করার যদি প্রচেষ্টা থাকে তবে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বসে সেসব বিষয় পর্যালোচনা করে কী করা যায়, সে বিষয়ে সচিব সমন্বয় করবেন। মূল দায়িত্ব তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর আছেই। মন্ত্রীকে আরও সহযোগিতা করার জন্য এটা করা হয়েছে।”

মোজাম্মেল হক বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, যারাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে চাইবে, তাদের নিয়ে তারা কাজ করবেন।

কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলে, “আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ছাড়া প্রত্যেক দল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে, সরকার কারো কাজেই বাধা দেয় না, দেবে না। যার যার দল কর্মসূচি নিয়ে সভা-সমিতি নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছে। যদি জনজীবন অচল করার প্রচেষ্টা করে সেক্ষেত্রে…. ভালোমত চললে সেটা তো তার অধিকার। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

“তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে বা জনজীবনের নিরাপত্তার রক্ষার জন্য কোনো কিছু হুমকির জন্য হলে কেবলমাত্র রাজনৈতিক নয়, যে কোনো কর্মকাণ্ড…। বর্তমান রজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন না।”

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে’ সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

“এরপর সরকারের কার্যক্রম নতুন কোনো পরিকল্পনা নিতে পারে না, শুধু রুটিন ওয়ার্ক করে যায়। অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে সব কিছু থাকে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা করবে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা করার তা পালন করবে। ভোটের পরিবেশ যাতে সুষ্ঠু থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য সচেতন থাকবে।”

বড় একটি দল নির্বাচন বর্জন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা, এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল বলেন, “জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। তারা জনগণের জন্য, কোনো দলের জন্য না। তারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।”

মোজাম্মেল বলেন, “আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ। বিশ্বের তুলনায় আমরা মনে করি ভালো অবস্থানে আছি। মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশে যেভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই জঙ্গিবাদকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। হলি আর্টিজনের ঘটনার পর এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতেও যাতে না ঘটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। জনগণও চায় না এমন ঘটনা আর ঘটুক।

“এখন নির্বাচনের সময়, পত্রপত্রিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বাইরে থেকে অস্ত্র আসতে পারে। সেজন্য বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

হুন্ডি ব্যবসা নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এটার কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এই ব্যবসাকে বন্ধ করার জন্য আরও তৎপর হওয়া এবং কীভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে আমরা বলেছি। জুয়ার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য এসেছে সেই আলোকে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“অল্প সংখ্যক এনজিও আছে যারা এ দেশের স্বর্বভৌমত্বের জন্য অ্যালার্মিং। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তাদের যে কর্মকাণ্ড সেটি খুব উদ্বেগের বিষয়। রোহিঙ্গাদের কিন্তু মিয়ানমার নিতে আগ্রহী ছিল, আমরা পাঠাতে রাজি হয়েছি। বিদেশিরাও কিছুটা কনভিন্স করেছে।

“যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কিছু এনজিও আছে তারা নিরুৎসাহিত করছে, গুজব রটায় যে, সেখানে গেলে নিগৃহীত হবে, আবার নির্যাতন করা হবে। এই অপপ্রচারের কারণে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে নেগেটিভ হয়েছে। গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

মন্ত্রী বলেন, “বিদেশে থেকে সাইবার ক্রাইম বন্ধ করতে পারছি না। মিথ্যাচার ও গুজব রটানো হচ্ছে। এনটিএমসিকে আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য গুজবের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। সত্যি ঘটনা তুলে ধরে প্রচার করার জন্য বলা হয়েছে।

“দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত যেটা সঠিকভাবে এখনো কার্যকর হয়নি। সরকারি সংস্থাগুলো যাতে এগুলো মনিটর করে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা উৎপাদন করছে তারা কিন্তু যে দাম পায় ভোক্তারা যখন কেন অনেক তারতম্য। মাঝে যাদের কারণে দাম বাড়ছে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার জন্য গুদামজাত করে রাখে সেসব ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

মন্ত্রী বলেন, পূজা আসন্ন, সে সময় যাতে আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন না হয়, নির্বিঘ্নে যাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন সবাই, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখবে।

“পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছি। এটি নিশ্চিত করতে ডিসি-ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”