ঢাকার কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বাড়ি’ জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ছয় বছর আর এ ঘটনায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের সাড়ে তিন বছরেও শুরু হয়নি বিচার।
করোনাভাইরাস মহামারী, আসামি হাজির না করা এবং জঙ্গি হামলার আলোচিত অন্যান্য মামলার চাপসহ আসামিপক্ষের সময় আবেদনের কারণে মামলাটি থমকে আছে।
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘তাজ মঞ্জিলে’ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নকশার কারণেওই বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে জাহাজ বাড়ি নামে পরিচিত।
ওই অভিযানে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি মারা যায়। হাসান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। পালিয়ে যায় আরও একজন। তারা সবাই জেএমবির সদস্য বলে দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই অভিযানের পর ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। তাতে আসামি হিসেবে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন।
সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের কথা থাকলেও এক আসামিকে আদালতে হাজির না করায় তা পিছিয়ে যায়। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ঠিক করেন বিচারক।
সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, “বারবার বেশ কয়েকজন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আসামির সামনে অভিযোগ গঠনের শুনানি নিতে হয়।”
তিনি জানান, মামলাটির তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় কোনো আসামি পলাতক থাকলে কিছু প্রক্রিয়া থাকে।
গোলাম ছারোয়ার বলেন, “এ মামলায়ও কবিরাজ নামে এক আসামি পলাতক রয়েছেন। এজন্য বিচার শুরু করতে একটু সময় লেগে গেছে। ওই প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা চার্জ শুনানি শুরু করি।
“কিন্তু ২০২০ সালে ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে অনেকটা সময় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এজন্য কার্যক্রম তেমন এগোয়নি।”
গুলশান হামলাসহ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার কাজ আগে করায় সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।
“হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলা, ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা, জুলহাজ-তনয় এসব আলোচিত মামলার বিচার শেষ করেছি। কিছু কারণে মামলাটির বিচার এখনও শুরু হয়নি।
“১২ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য আছে। আশা করছি, ওইদিন মামলার চার্জ গঠন হয়ে যাবে। চার্জ গঠন হয়ে গেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের হাজির করে মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করব।”
জাহজাবাড়িতে অভিযানের দুই বছর পর ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।
এরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)।
আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক আছেন। আব্দুর রউফ এবং আবুল কাশেম জামিনে আছেন। এছাড়া অপর সাত আসামি রয়েছেন কারাগারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালতের এক আইনজীবী বলেন, “যেহেতু এ মামলার আসামিদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে আরও মামলা ছিল ও রয়েছে, সেসব মামলাতেও ওইসব আদালতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
“আর যেহেতু এ মামলার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছিল হলি আর্টিজান, ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা, জুলহাজ-তনয় হত্যা, সেসব মামলার বিচারে মনোযোগ দিতে যেয়ে এ মামলার বিচার পিছিয়ে গেছে।”
ওই আইনজীবী জানান, এর আগে ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে আসামি আব্দুর রউফ প্রধানের পক্ষে মামলা থেকে অব্যহতির আবেদন করেছিলেন আইনজীবী আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন।
এছাড়া অপর আসামি মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর ও সালাহ উদ্দিন কামরানের পক্ষে আইনজীবী জাকির হোসেন অব্যহতির আবেদন করেছিলেন।