ফেইসবুকে তিনি ‘পাইলট’, করেন প্রতারণা

বেনজির হোসেন নামের ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির ১৩টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2023, 10:04 AM
Updated : 27 Nov 2023, 10:04 AM

অন্যের পরিচয় ও ছবি দিয়ে ভুয়া ফেইসবুক প্রোফাইল সাজিয়ে, নিঃসঙ্গ নারীদের বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ বলছে, বেনজির হোসেন নামের ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির ১৩টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুই নারীর করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গত ২২ নভেম্বর খুলনার ফুলতলা থেকে বেনজিরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান।

সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ফেইসবুকে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে আসছিল। প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাত সে। এভাবে সে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে এসেছে বছরের পর বছর।”

এ ধরনের প্রতারণার পাশাপাশি পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণা, হুন্ডি ব্যবসা, মানবপাচারসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে বেনজির জড়িত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিমান চালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে একটি ভুয়া ফেইসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন বেনজির। প্রোফাইলটি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিয়মিত আসল শাহিদের ফেইসবুক পেইজ থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও নিয়ে ওই ভুয়া পেইজে পোস্ট করতেন।

“ওই পরিচয়ে সে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে নিঃসঙ্গ নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলত। বেনজির অডিও কলে কথা বললেও নানা অজুহাত দেখিয়ে ভিডিও কল এড়িয়ে যেত। অনলাইনে প্রেমের এক পর্যায়ে সে বিভিন্ন রকম বিপদে পড়ার কথা বলে বিভিন্ন এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) নম্বরে টাকা নিত।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেনজিরের বাড়ি নড়াইলের মির্জাপুরে। সেখানে বসেই তিনি এরকম প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রতারণা করে পাওয়া অর্থ তিনি ক্যাশ আউট করতেন বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর কিংবা খুলনার বিভিন্ন ক্যাশ আউট পয়েন্টে গিয়ে।

আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রতারণার কাজে সে যে সিম ব্যবহার করত, এমএফএস নম্বরের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত যে এনআইডি নম্বর, সবই অন্য ব্যক্তির। ক্যাশ আউট করার সময় পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পরে থাকত।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একজন নারী বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। আরেক নারী খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

তারা ওয়ারী থানায় মামলা করার পর সিটিটিসি তদন্তে নামে। এরপর গত ২২ নভেম্বর খুলনার ফুলতলার এক দোকান থেকে ক্যাশ আউট করার সময় বেনজির হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।

তিনি বলেন, বেনজিরের ফোনে শাহিদ হাসানের নামের সেই ভুয়া ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট লগড-ইন অবস্থায় পাওয়া যায়। ফোন ও সিম পরীক্ষা করে বোঝা গেছে, তার প্রতারণার শিকার মানুষের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

আসাদুজ্জামান বলেন, “দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও বেনজির গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।”