পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে দেশটির সহায়তাপুষ্ট এনজিওর ধারণা ফুটে উঠেছে।
Published : 25 Apr 2024, 08:33 PM
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি ‘প্রমাণহীন অভিযোগের উপর নির্ভর করে’ তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তাপুষ্ট স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওর ধারণাও এতে ফুটে উঠেছে এবং বেশ কিছু ‘বেনামি উৎস’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশ করা ‘২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবির বিপরীতে গিয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘বড় রকমের উন্নতি’ হওয়ার দাবি এতে বলা হয়, “সরকারের এসব উন্নতি ও অর্জন দুঃখজনকভাবে প্রতিবেদনটিতে স্বীকার করা হয়নি।
“অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগগুলোকে পদ্ধতিগত প্রবণতা হিসেবে তুলে ধরার ধারা বজায় রাখা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালেও ‘বড় কোনো পরিবর্তন’ দেখা যায়নি।
দেশভিত্তিক মানবাধিকার চর্চা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, “গত বছর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্বিচারে বেআইনি হত্যার ঘটনা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অসম্মানজনক আচরণ, কারাগারের কঠিন ও জীবনের জন্য হুমকির পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার-আটক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় গুরুতর সমস্যা, অন্য দেশে থাকা ব্যক্তিদের ওপর দমন-পীড়নের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।”
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের জন্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ব্যবহার করেছে’ বলেও মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ হিসাবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “তাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে।”
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
তিনি বলেন, “সবিস্তারে প্রতিবেদনটি পড়লে এটা স্পষ্ট হবে যে, বিবৃত বা কথিত পৃথক ঘটনাগুলোকে বিস্তৃত ও সাধারণীকৃত অনুমানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
“এটি আরও প্রতীয়মান হয় যে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওর ধারণা এবং প্রমাণহীন অভিযোগের উপর নির্ভর করেছে প্রতিবেদনটি, যার মধ্যে আছে বেনামি উৎসও; যাদের (এনজিওগুলোর) অনেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তাপুষ্ট বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত।“
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে সেহেলী বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, নির্বাহী আদেশে যার সাজা স্থগিত রয়েছে এবং নিশ্চিতভাবে তিনি কোনো ধরনের গৃহবন্দি নন।”
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধীদের অবস্থান প্রতিবেদনে অনুপস্থিতি বলেও মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হলেও বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয় তুলে ধরতে তা ব্যর্থ হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে ধারাবাহিক সংলাপ স্বত্বেও বারবার তুলে ধরা অভিযোগ প্রতিবেদনে আবারও এসেছে জানিয়ে একে ‘দুঃখজনক’ বলেন সেহেলী।
রোহিঙ্গাদেরকে ‘শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি’ অভিহিত করার মাধ্যমে মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে তাদের আইনি অধিকারকে যুক্তরাষ্ট্র ‘খাটো’ করেছে বলেও মত দেন তিনি।
তবে প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকার ভবিষ্যতে আলোচনা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, “পুরো প্রতিবেদন আমলে নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যাবলি, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছে।”
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র