অন্য বিমানবন্দরগুলো থেকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা জনবল এবং বিমান বাহিনীর সদস্যদের কাজে লাগানো হয়েছে।
Published : 24 Aug 2024, 12:29 AM
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত ৯০২ জন আনসার সদস্য বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে কাজ না করায় বিকল্প উপায়ে কার্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আনসার সদস্যদের কর্মবিরতিতে কার্যক্রম চালু রাখতে অন্য বিমানবন্দরগুলো থেকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা জনবল এবং বিমান বাহিনীর সদস্যদের কাজে লাগানো হয়েছে।
পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের ৩০০ সদস্য।
শুক্রবার রাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য দেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।
এ সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ বেবিচক, পুলিশ ও আনসারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বন্যার কারণে ফ্লাইট ধরতে না পারা আন্তর্জাতিক যাত্রীদের টিকিট রিইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি টাকা না নিতে এয়ারলাইনসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বেবিচক।
পাশাপাশি বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে বাড়তি ফ্লাইট চালানো এবং টিকিটের দাম না বাড়ানোর জন্য দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৯০২ আনসার কর্মবিরতিতে
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের এখানে ৯০২ জন সাধারণ আনসার সদস্য ছিলেন। তারা হঠাৎ করে নাই। এত বড় একটা বিমানবন্দরে যেখানে তিন কিলোমিটার রানওয়ে, পাশপাশি তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে; অনেকগুলো জায়গায় গেইট খোলা রয়েছে। এসবের প্রতিটি পয়েন্টের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হয়।
“এখানে একটা লোক, এমন কী একটা কুকুরও রানওয়েতে ঢুকে পড়লে আমরা ইনসিকিউর হয়ে পড়ি। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে যদি ৯০০ লোক চলে যায়, তাহলে কত বড় ভ্যাকুয়াম তৈরি হয় ভাবুন! ”
বিকল্প উপায়ে নিরাপত্তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, “কিন্তু আমাদের বেবিচকের নিজস্ব আইকাও সার্টিফাইড নিরাপত্তা কর্মকর্তা, আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন এবং বিমান বাহিনীর সহায়তায় আমরা খুব অল্প সময়ে সংকট কাটিয়ে উঠেছি।
“বিশেষ করে বিমান বাহিনীর কথা না বললেই নয়। বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই, তিনি যেভাবে সাহায্য, সহযোগিতা করেছেন।”
বিমান বাহিনী থেকে কতজন আনা হয়েছে, জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের টোটাল আগে থেকে কাজ করছিল ৮০০ জন, এখন সব মিলিয়ে কাজ করছে ১২শ থেকে সাড়ে ১২শ জনের মতো। এর ভেতরে টাস্কফোর্সসহ অন্য ইউনিটগুলোও আছে। এই সময়টায় আনসারের আর্মড গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন।
“বৃহস্পতিবার তারা ২০০ জন ছিলেন, শুক্রবার ১০০ জন এসেছেন। আমাদের বেবিচকের আইকাও সার্টিফাইড যে সিকিউরিটি প্রফেশনালরা আছে তাদেরকে অন্য এয়ারপোর্ট থেকে এখানে আনা হয়েছে।”
“এই ৯০২ জন লোকের অভাব আমরা বুঝতে দেইনি। আমাদের অপারেশন এক মিনিটের জন্য ব্যহত হয়নি,” বলেন মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।
আর দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে রাজি নন আনসার সদস্যরা; চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে তারা অব্যাহত রেখেছেন রাজপথের আন্দোলন।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ জানানোর পর শুক্রবার বিকালেও একই কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা।
এদিন বিকাল ৩টার দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জমায়েত হন শাহবাগে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন শতাধিক আনসার সদস্য সেখানে বিক্ষোভ দেখান।
পরে তারা মিছিল নিয়ে মৎস্যভবনের দিকে চলে যান বলে তথ্য দেন রমনা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সোহেল রানা জানান।
প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রেখে বিভিন্ন স্লোগান দেন আনসার সদস্যরা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে তৈরি হয় যানজট। একই সময় বিমানবন্দরের সামনেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শতাধিক আনসার সদস্য।
একই কর্মসূচির মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মবিরতি যান ৯ শতাধিক আনসার সদস্য। এতে হঠাৎ নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়।
ভবিষ্যতে নিজস্ব জনবল সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, “আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে যাতে এভাবে আর সমস্যায় না পড়ে যাই। এই সক্ষমতা গড়ে তোলার পেছনে আমার দরকার যারা এয়ারসাইট অপারেশনটা বোঝে তাদের নিয়ে আসা। বাইরে থেকে আনলে তারা বিমানবন্দরের অপারেশন্স বুঝবে না।”
এই আনসার সদস্যরা ফিরে এলে তাদের আবারও ডিউটিতে মোতায়েন করা হবে জানিয়ে মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, “অনেক গুজব ছড়িয়েছে বলে শুনেছি- তাদের এখানে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে আমরা বলেছি, তারা এলে তাদের আবার আগের মতোই দায়িত্বে নিয়োজিত করা হবে।”
এমপক্স নিয়ে সতর্কতা
এখনও দেশের কোনো বিমানবন্দরে এমপক্স আক্রাস্ত যাত্রী পাওয়া যাযনি জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, শুক্রবার সকালে কাতার থেকে আসা এক যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি ও শরীরে হালকা র্যাশ পাওয়া যায়। তাকে দ্রুত আইসোলেশনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
“পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় আইইডিসিআরে, তবে ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। আমাদের মেডিকেল টিম কিন্তু খুবই এ্যাকটিভ আছে।”
বিনাপয়সায় টিকিট রিস্যুর নির্দেশ
বন্যার কারণে যে যাত্রীরা ফ্লাইট ধরতে পারেননি তাদের টিকিট রিইস্যুর ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো অর্থ না নিতে ৩৩টি এয়ারলাইনসকে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। এ বিষয়ে মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, “বন্যার কারণে ফেনীসহ অনেক জায়গা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেক যাত্রী ফ্লাইট মিস করতে পারেন। আমরা এয়ারলাইনসগুলোকে বলে দিয়েছি তাদের টিকিট রিইস্যুতে যেন বাড়তি কোনো টাকা নেওয়া না হয়।”
পাশাপাশি বন্যার কারণে সড়ক পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যাতায়াতে অভ্যন্তরীণ আকাশপথে চাপ বেড়েছে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোকে বলে দিয়েছি, তারা যেন এই দুর্যোগের মধ্যে বাড়তি ভাড়া না নেন। পাশাপাশি তাদের ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে। নভোএয়ার এর মধ্যেই ফ্লাইট বাড়িয়েছে।”
শুক্রবার পর্যন্ত বন্যায় নতুন করে তিনটি জেলাসহ ১১টি জেলা প্লাবিত হওয়ার তথ্য দিয়ে সরকার জানাচ্ছে, ১৫ মৃত্যুসহ প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এই বন্যায় দুই দিনের ব্যবধানে দেশের অন্তত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসব জেলায় প্রায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯টি পরিবারের মানুষ এখন, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন মানুষ।