ব্রিটিশ রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা শেখ হাসিনার

বোন শেখ রেহানা  এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিটিশ রানির কফিনে সম্মান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2022, 11:52 AM
Updated : 18 Sept 2022, 11:52 AM

লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি শামিল হয়েছেন হাজারো মানুষের কাতারে, যারা সবচেয়ে বেশি সময় ব্রিটেনের সিংহাসনের অধিষ্ঠাত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সমবেত হয়েছেন।

রোববার সকালে বোন শেখ রেহানা এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক ওয়েস্টমিনস্টার হলে যান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তারা দুইজনই (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলেন পুরোটা সময়। রানি উনাদের দুই বোনকেই খুব ভালোবাসতেন। একজনকে দেখলে আরেক জনের কথা জিজ্ঞেস করতেন।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এবং নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নসহ বিশ্ব নেতাদের অনেকেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ব্রিটিশ রানির কফিনে।

প্রয়াত ব্রিটিশ রানিকে বর্তমানে ওয়েস্টমিনস্টার হলে শায়িত রাখা হয়েছে। সেখানেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে চলছে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। সোমবার ওয়েস্টমনিস্টার অ্যাবিতে হবে তার শেষকৃত্য।

সাইদা মুনা তাসনিম জানান, রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে তাকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে রানির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খোলা শোক বইতে সই করেন প্রধানমন্ত্রী।

শোক বইতে শেখ হাসিনা বাংলায় লেখেন, “বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার ও আমার ছোট বোন রেহানার পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।” 

শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা শোক বইতে স্বাক্ষর করে লিখেছেন, “তিনি ছিলেন আমাদের হৃদয়ের রানি, চিরদিন তাই থাকবেন। “

ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকি ফোর্ট। প্রয়াত রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং দুজনে কিছু মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে তার ৮-৯ বার দেখা হয়েছে।

“এডিনবরা সামিট থেকে শুরু করে যতগুলো কমনওয়েলথ সামিট হয়েছে, আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এছাড়া লন্ডন অলিম্পিকসের সময় রানির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। প্রতিবারই রানি আমাকে নামে চিনতেন।

“সব সময়ই উনি আমাকে নাম ধরে ডেকে জিজ্ঞেস করতেন, হাসিনা কোথায়? যখনই কমনওয়েলথ সামিট হত, জিজ্ঞেস করতেন আমি গিয়েছি কিনা।”

ভিকি ফোর্টকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার দেখে খুব খারাপ লেগেছে। মনে হচ্ছে আমার মায়ের মতো কেউ চলে গেল। তিনি ছিলেন মাদারলি একটা ফিগার। উনি চলে গেলেন, অনেক বড় একজন গার্ডিয়ান মনে হয় চলে গেল।”

দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটিশ সিংহাসনে অসীন থাকার পর গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি ব্রিটেন ছাড়াও আরও ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান এবং বাংলাদেশসহ ৫৬ সদস্যের কমনওয়েলথের প্রধান ছিলেন।

রানির মৃত্যুতে তার সম্মান তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে বাংলাদেশ  সরকার। রানির আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা করা হয়।

তার শেষকৃত্যে অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাবেন।

রানির মৃত্যুতে দুই সপ্তাহের রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা চলছে ব্রিটেনে। বিয়োগান্তক এই আয়োজন ঘিরে সোমবার পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় বিশ্ব নেতা ও রাজনীতিবিদদের নজীরবিহীন এক সমাবেশ দেখা যাবে।

২ হাজার অতিথি, প্রায় ২০০টি দেশ ও অঞ্চলের সরকার প্রধানসহ ৫০০ বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ৪ হাজার সেবাকর্মী রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। সেইসঙ্গে লন্ডনের হাজারো মানুষ রানিকে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন। টেলিভিশনে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সেই অনুষ্ঠান দেখছে।