বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুয়ায়ী বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার কথা।
Published : 17 Jul 2024, 07:35 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার সংঘাত-সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হল ছাড়া শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যেতে বলা হয়।
নির্দেশের আগেই সকাল থেকে আতঙ্কে হল ছাড়া শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তবে নির্দেশনা আসার পরই দলে দলে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ব্যাগ বহন করতেও দেখা যায়।
অবশ্য সন্ধ্যা ৬টার পরও বিভিন্ন হলে কিছু শিক্ষার্থীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও হল ছেড়ে যাবেন।
হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হল আমার সেকেন্ড হোম।এভাবে হল ছাড়তে হবে ভাবিনি। তবুও বাস্তবতা মানতে হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া করায় সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, “জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে আমাদের নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে। কিন্তু এক দিনও ক্লাস হল না। জানি না, আবার কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে? একটি অনিশ্চিত সেশনজটের দিকে যাচ্ছি আমরা।”
হল খালি করার নির্দেশকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের নির্দেশে হল বন্ধ করে দিয়েছে। হল বন্ধ করে দিয়ে তারা আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এই আন্দোলন দমন করা যাবে না। আমরা যার যার জায়গা থেকে শহীদ ভাইদের রক্তের বদলা নেব।”
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী। তিনি চাইলে সহজেই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা যেত। কিন্তু তিনি সেটা না করে শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে উস্কে দিয়েছেন। যার কারণে এক দিনে ছয়টি লাশ পড়েছে। এর জন্য আমরা তাকে ( প্রধানমন্ত্রীকে) কখনও ক্ষমা করব না।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশের মধ্যে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছাত্রদের কয়েক দফায় ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবারের সংঘাতে দেশে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজায় বাধার মধ্যেও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী।
এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন ধরে শপথ করেন। তারা সমস্বরে বলেন, "এই আন্দোলন আমরা বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন থেকে সরে যাব না।"
তবে সাউন্ড গ্রেনেড ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনার পর বিকাল ৫ টার দিকে আন্দোলনকারীর ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের আটকে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।”
শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার দুপুরের পর এই জানাজার ঘোষণা ছিল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
সেখান থেকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সভাপতি আখতার হোসেনকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।
পরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং সেখানেই জানাজা পড়ার ঘোষণা দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সোমবার হঠাৎ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে।
পরের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় হয় সংঘাত সহিংসতা। মঙ্গলবার ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন মিলে ছয়জন নিহত হন।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে সব স্কুল কলেজ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসে। বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে হল ছাড়ারও নির্দেশ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যেতে দেখা যায়।