অবমাননা: বার্গম্যানের রায় ১ ডিসেম্বর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয়ে ব্লগে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করায় সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের রায় পিছিয়ে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2014, 08:04 AM
Updated : 2 Dec 2014, 02:59 AM

সোমবার এ বিষয়ে আদেশের দিন থাকলেও ‘ব্যক্তিগত সমস্যার’ কথা জানিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ রায়ের জন্য ১ ডিসেম্বর নতুন দিন ঠিক করে দেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়।

বার্গম্যান ও তার স্ত্রী সারা হোসেন এবং তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান এদিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজান সাঈদ।

প্রসিকিউটরদের মধ্যে জেয়াদ আল মালুম এবং তুরিন আফরোজ আদালতে ছিলেন।

গত ১৮ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে নিজের ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন ডেভিড বার্গম্যান। তাতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল ১৭ এপ্রিল তাকে আবারো জবাব দাখিল করতে বলে।

১১ মে ওই জবাবের বিষয়ে শুনানির কথা থাকলেও উভয়পক্ষের আবেদনে তা কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। পরে ২৫ অগাস্ট বার্গম্যানের পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো দাখিল করা জবাবের বিষয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।

বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। পরদিন এ বিষয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাঈদ মিজান।

ওই দিন তিনি শুনানিতে বলেন, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার নিজের ব্লগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি ‘আজাদ জাজমেন্ট অ্যানালাইসিস-১, ইন অ্যাবসেন্সিয়া ট্রায়াল অ্যান্ড ডিফেন্স ইনডিকোয়েন্সি’ এবং ‘আজাদ জাজমেন্ট অ্যানালাইসিস-২, ট্রাইব্যুনাল অ্যাজাম্পশন’ শীর্ষক লেখা প্রকাশ করেন।

এসব লেখায় ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আবুল কালাম আযাদের রায় নিয়ে করা মন্তব্যে ট্রাইব্যুনালের মর্যাদাহানী হয়েছে বলে আবেদনে অভিযোগ করা হয়।

সাঈদ মিজান শুনানিতে বলেন, ডেভিড বার্গম্যান ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার আগেই সেই রায় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া বিচারাধীন বিষয় নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন তার লেখায়। এসব মন্তব্য বিচারিক আদালতের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ এবং জনস্বার্থবিরোধী’। এগুলো রায় নিয়ে জনগণের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি করেছে এবং ‘জাতীয় অনুভূতিকে’ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় নিয়ে করা মন্তব্যেও আদালত অবমাননা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে লেখালেখির জন্য বিচারপ্রার্থী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে সমালোচিত বার্গম্যান।

এর আগে ২০১১ সালে ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এইজ’ এ মতামত কলামে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ডেভিড বার্গম্যানকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছিল ট্রাইব্যুনাল।

নিজের ব্লগের বিষয়ে ডেভিড বার্গম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সে সময় বলেছিলেন, “সেখানে ট্রাইব্যুনালের দেয়া কিছু আদেশ নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য রয়েছে, তবে সেগুলো পরিমিত ও নিরপেক্ষ, যদিও কেউ কেউ এতে দ্বিমত পোষণ করতে পারে।”

এর আগে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর ‘এ ক্রুসিয়াল পিরিয়ড ফর আইসিটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদালত অবমাননার অভিযোগে প্রতিবেদক ডেভিড বার্গম্যান, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির এবং প্রকাশক আ স ম শহীদুল্লাহ খানকে কারণ দর্শাতে বলে ট্রাইব্যুনাল।

শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডেভিড বার্গম্যানকে সর্বোচ্চ সতর্ক করে আদেশ দেয়া হয়।

সে সময় আদালত অবমাননা হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল শুধুমাত্র ভাবমূর্তির বিবেচনায় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেনের স্বামী।