বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ নিয়ে উভয়পক্ষের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর বিকাল ৪টার দিকে দুইপক্ষের মধ্যে সমঝোতার হলে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখা হয়।
এর আগে সকালে জিন্দাপার্ক উচ্ছেদে ৫০০ সদস্যের ৩০ প্লাটুন পুলিশ সদস্য সেখানে যায়। তখন এ উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে অগ্রপথিক পল্লী উন্নয়ন সমিতির নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা পার্কের সড়কের সামনে বসে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পার্কের ভেতরে থাকা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, হাই কোর্টে রুলের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পার্কটিতে ‘অবৈধভাবে’ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
পূর্বাচল শহর উন্নয়নের জন্য রাজউক জিন্দাপার্ক অধিগ্রহণ করে। পরে দরপত্র ডেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে পার্কটি পরিচালনার জন্য ইজারা দেয় তারা।
পার্ক সৃষ্টিকারী অগ্রপথিক পল্লী সমিতি অন্যদের কাছে না দিয়ে তাদের কাছে সেটি ইজারা দেয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য ৩০ নং সেক্টরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়।
আদালতের রুলের বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজউক রুলের জবাব দিয়েছে। রাজউকের নির্দেশেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছিল।”
প্রায় পাঁচ ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলে জিন্দাপার্ক এলাকায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকদফা ধস্তাধস্তিও হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, “রাজউকের কালো থাবার কারণে প্রাকৃতিক ও সুন্দর পার্কটি অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় রাজউক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাচ্ছি।”
অগ্রপথিক পল্লী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা তবারক হোসেন কুসুম বলেন, “আমরাই এই পার্কের প্রতিষ্ঠাতা। পূর্বাচল উপ-শহরের জন্য জমি অধিগ্রহণের আগে থেকেই র্পাকটি প্রতিষ্ঠা করে আসছি। আমরা রাজউকের কাছে আবেদন করেছি হয় এটি আমাদেরকে অবমুক্তি দাও, না হলে ইজারা দাও।
“কিন্তু তারা এটা না করে একটি তৃতীয় পক্ষকে ইজারা দেয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে গেলে, আদালত কেন আমাদেরকে পার্কটি দেয়া হবে না রাজউকের বিরুদ্ধে রুল জারি করে।”
রুল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই এই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে আসে রাজউক, বলেন তবারক।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দুপুরে রাজউকের পক্ষে সেখানে যান ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ দৌলা, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু নাইম খান এবং নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তারা সেখানে যাওয়ার পর প্রায় দুঘণ্টাব্যাপী আলোচনার পর জিন্দা পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব অগ্রপথিক পল্লী সমিতিকে দেয়ার আশ্বাস দিলে সমঝোতা হয়।
তবে সেখানে রাজউকের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তাতে লেখা আছে, “এই জমি রাজউক অধিগ্রহণকৃত।”
এসময় রোকন উদ দৌলা বলেন, “জিন্দাপার্কটিকে পার্ক হিসেবেই রাখতে চায় রাজউক। আর এটি আপাতত পরিচালনাও করবেন তারা।”
পরে এ বিষয়ে আরো বৈঠক হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জিন্দা পার্কের যাত্রা শুরু ১৯৮১ সালে। অগ্রপথিক পল্লী সমিতির প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য ১০০ বিঘা জমির উপর এ পার্কটি গড়ে তোলেন। সদস্যরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি, কেনা জমি এবং ইজারা নেয়া জমি দিয়ে এ চমৎকার নৈসর্গিক পার্কটি গড়ে তুলেছেন।
এর ভেতরে পাঁচটি জলাশয়, পাঁচশ’ প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ঔষধিসহ কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। আছে স্কুল, মসজিদ, পাঠাগার, কটেজ ও অফিসসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনাও।