আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় শুরুতে ঘাটশ্রমিকরা আটক হলেও পরে তদন্তে ওঠে আসে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাসহ মন্ত্রীদের নাম।
Published : 29 Jan 2014, 08:53 PM
এই ঘটনায় করা মামলা দুটির প্রথম অভিযোগপত্রে চোরাকারবারী, ট্রলার ভাড়াকারী ও শ্রমিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে আসামি করা হয় ঘাটশ্রমিক ও নৌকার মাঝিকে।
রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল এবং অধিকতর তদন্ত শেষে সাত বছর পর দেয়া হয় আরেকটি অভিযোগপত্র, যাতে আসামি করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, সচিব, গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতাকেও।
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে সাক্ষীরা নতুন এসব আসামির জড়িত থাকার বিষয়ে বক্তব্য দেন। জেরাতেও উঠে আসে দশ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র আনার সঙ্গে নতুন ১১ আসামির সংশ্লিষ্টতার বিভিন্ন তথ্য।
ঘটনার দশ বছর পর বৃহস্পতিবার দেয়া হচ্ছে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপিনেতা লুৎফুজ্জামান বাবরের জ্ঞাতসারেই অস্ত্র এসেছে। এরা বিভিন্ন সময় আসামিদের বাঁচানোরও চেষ্টা করেছেন।
“তৎকালীন সরকারের ভারতবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে অস্ত্র পাচারের কাজে ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছে।”
নতুন ১১ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন দাবি করে পিপি কামাল বলেন, এ জঘন্য অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শতভাগ প্রমাণ করেছি।
এজাহারে কারও নাম নেই, আসামি ঘাট শ্রমিক:
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গভীর রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত সিইউএফএল জেটিঘাটে খালাসের সময় আটক হয় দশ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র।
গভীর সাগর থেকে অস্ত্র বহন করে নিয়ে আসা দুটি ট্রলার এবং অস্ত্র পরিবহনের জন্য ভাড়া করা পাঁচটি ট্রাক আটক করে পুলিশ।
ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে রাতেই আটক পাঁচজন হলেন প্রদীপ কুমার দাশ, বাবুল মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, নুর নবী ও মো. হেলাল উদ্দিন। এদের কেউ ঘাট শ্রমিক বা বহনকারী ট্রাকের হেলপার।
ওই ঘটনায় ৩ এপ্রিল কর্ণফুলী থানায় করা মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ ছিল না।
পিপি কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এজাহারে অস্ত্র আনা দুই ট্রলার এমভি খাজার দান ও এফভি শাহ আমানতের মালিক-শ্রমিক-কর্মচারী এবং পাঁচ ট্রাকের মালিক-চালককে নাম উল্লেখ না করে আসামি করা হয়।
২০০৪ সালের ১১ জুন এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় অভিযোগপত্র দেন সিআইডির এএসপি কবির উদ্দিন। ওই অভিযোগপত্রে ৩৯ জনকে আসামি করা হয়।
এতে আসামি ছিলেন চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান ও দ্বীন মোহাম্মদ, ট্রলার ভাড়াকারী হাজী মো. আবদুস সোবহান, শ্রমিক সরবাহকারী আরজু পাগলা ও আবুল কাশেম মধু।
এর সঙ্গে আসামি ছিলেন স্থানীয় মেম্বার মরিয়ম বেগম ওরফে বদনী, নুরুল আফছার ওরফে আফছার মেম্বার, ওসমান মিস্ত্রী, রহিম মাঝি, ঘটনার রাতে আটক পাঁচ ঘাট শ্রমিক ও নৌকার মাঝিরা।
পিপি কামাল বলেন, “শুরুতে যাদের আসামি করা হয় তা অত্যন্ত হাস্যকর। ২০০৪ সালের চার দলীয় জোট সরকার ওই মামলা সৃষ্টি করেছিল। তাই এরকম লোকজনকে আসামি করা হয়।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা অধিকতর তদন্তে যায়। আদালতের সাত নির্দেশনা অনুসারে শুরু হয় তদন্ত।
মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরী অস্ত্র ৫০ জন ও চোরাচালান মামলায় ৫২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
এবার আসামি হন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপিনেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, এনএসআই’র তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, সিইউএফএল’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, সাবেক জিএম (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্প সচিব নুরুল আমিন ও উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া।