হরতালের আগুনে এমন নির্মমভাবে আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয় সেজন্য নিহতের মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরাসহ এলাকাবাসীরা হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মনির।
তার মৃত্যুর খবরে চাপাইরের বড়কাঞ্চনপুর গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মনিরদের বাড়িতে ভিড় জমায়।
তখন মনিরের মা মিনারা বেগমের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। তা দেখে অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মিনারা বিলাপ করে বলতে থাকেন, “আমরা তো কোনো রাজনীতি বুঝি না, রাজনীতিও করি না। এরপরও কেন হরতালের নির্মম বলি হতে হলো আমার ছেলেকে।”
ছেলের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, হরতালের আগুনে এমন নির্মমভাবে আর কোন মায়ের বুক যাতে খালি না হয়।
এসময় উপস্থিত এলাকাবাসীরাও একই দাবি জানান।
বড়কাঞ্চনপুর এলাকার কাভার্ডভ্যান চালক মো: রমজান আলীর ছেলে মনির সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা পূর্বপাশে জাতীয় আইন কলেজের সামনে দাঁড় করানো বাবার কাভার্ডভ্যানে ঘুমিয়ে ছিল। হরতালের সমর্থকরা কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দিলে মারাত্মক দগ্ধ হয় সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ভোর পৌনে ৫টার দিকে হাসপাতালের মনিরের মৃত্যু হয়।
এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালেই গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক ও চাপাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো সাইফুজ্জামান সেতুসহ স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান।
বিকেল ৩টার দিকে মনিরের লাশ বড়কাঞ্চনপুরে পৌঁছে। এসময় আত্মীয়স্বন ও এলাকাবাসীর আহাজারিতে পুরো এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মনিরে মা-বাবা কয়েকবার মুর্ছা যান।
বাদ আসর নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মনিরের লাশ দাফন করা হয়।
জয়দেবপুর থানার ওসি এমএম কামরুজ্জামান জানান, মনির অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় ওইদিন রাতে করা মামলায় এজাহারভুক্ত সাত আসামিসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- মাহবুবুর রহমান, মাহমুদ হাসান ওরফে মামুন, ওমর ফারুক, নূরুল ইসলাম, আবু ফয়সাল আল আরিফ, আমজাদ হোসেন, আফাজ উদ্দিন, হুমায়ূন কবির, জহিরুল ইসলাম, খোকন, আব্দুস সাত্তার ও সোহেল রানা।
মনির অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় জয়দেবপুর থানার এসআই মো. হাফিজুর রহমানের করা মামলায় গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর আবুল হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক এসএম সানাউল্লাহ, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর শহর জামায়াতের সভাপতি খায়রুল হাসান, বিএনপি নেতা সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমেদসহ ৫৪ জনসহ অজ্ঞাত আরো অন্তত ২৫ জনকে আসামি করা হয়।