চট্টগ্রামকেও ঈদ উপহার ফ্লাইওভার: প্রধানমন্ত্রী

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করে তা চট্টগ্রামবাসীর জন্য ‘ঈদ উপহার’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম অফিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2013, 08:00 AM
Updated : 12 Oct 2013, 09:35 AM

বন্দর নগরীতে শনিবার উদ্বোধন হওয়া এই ফ্লাইওভারটি আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত এম এ মান্নানের নামে করার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ এম এ মান্নান আওয়ামী লীগের বিগত (১৯৯৬-২০০১) সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে একদিনের সফরে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ছাড়াও ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং আটটির ভিত্তিস্থাপন করেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরালও উদ্বোধন করেন তিনি।

ঢাকা থেকে সকালে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নামেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে সড়ক পথে তিনি নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে ফ্লাইওভার এলাকায় যান।

ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী যান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে। সেখান থেকে তিনি নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সুধী সমাবেশে যোগ দেন।

সুধী সমাবেশে একযোগে ২১টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং আটটি প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপনের পর দেয়া বক্তব্যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট চান তিনি।

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য ‘ঈদ উপহার’ অভিহিত করে শেখ হাসিনা এটি প্রয়াত এম এ মান্নানের নামে করার ঘোষণা দেন।

একদিন আগে ঢাকায় দেশের দীর্ঘতম ফ্লাইওভার উদ্বোধন করে তিনি তাকে ঢাকাবাসীর জন্য ঈদ উপহার আখ্যায়িত করেন তিনি।

সকাল পৌনে ১১টায় নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সবার ব্যবহারের জন্য কার্যত এটি চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার। এছাড়া একটি ফ্লাইওভার থাকলেও তা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মহাসড়ককে সংযুক্ত করেছে।

বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের সংযোগ রক্ষাকারী এই উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর নিজস্ব অর্থায়নে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর গার্ডার ধসে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর পর থেকে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের তদারকি করছে সেনাবাহিনী।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আগে বলেছিলেন, উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও ছোট ছোট কিছু কাজ চলবে। পুরোপুরি কাজ শেষ হলে তা সিডিএ বুঝে পাবে।

অনুষ্ঠানে সিডিএ চেয়ারম্যান তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল আলম খান।

উদ্বোধনের পর খুলে দেয়া হলে উৎস্যুক জনতা ফ্লাইওভারের ওপর ভিড় জমায়।

সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বারিক বিল্ডিং হয়ে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনাও জানান।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা জানিয়ে সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় চট্টগ্রামবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর যতবার চট্টগ্রাম এসেছি ততবার অমি টুঙ্গিপাড়ায়ও যাইনি। এতে থেকে বোঝা যায়, চট্টগ্রামের উন্নয়নে আমরা কতটা আন্তরিক ও সচেষ্ট।”

অনুষ্ঠানে ভিত্তিস্থাপন করা নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে  করার ঘোষণাও দেন তিনি।

সুধী সমাবেশে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান ও সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়াও ছিলেন।

সুধী সমাবেশ শেষে সড়কপথে আবার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দরবারে যোগ দেবেন তিনি।

সেনানিবাস থেকে বিএমএ’র উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের পর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমিতে অন্য একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবেন তিনি।

যেসব প্রকল্প উদ্বোধন হল

অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক, দেওয়ানহাট ওভারপাস, সল্টগোলা কর্মজীবী মহিলা ডরমিটরি, ঢাকা ট্রাংক রোড (অলংকার থেকে দেওয়ানহাট), আরাকান রোড, হাটহাজারী রোড (অক্সিজেন-অলিখাঁ মসজিদ), পাঠানটুলি রোড, কলেজ রোড (গণি বেকারি-অলিখাঁ মসজিদ), সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিপণি বিতান বি ব্লক (দশম তলা), ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় শিক্ষা কমপ্লেক্স।

পটিয়া পৌরসভা, রাউজান উপজেলায় ২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুত প্লান্ট, রাংগুনিয়া উপজেলায় শেখ রাসেল এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক, রাউজানে মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স, সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফেরিঘাটের জেটি, মিরসরাই উপজেলা অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, পটিয়ায় গোবিন্দরখালী সুপার মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার, ফটিকছড়ি উপজেলার ফতেহপুর কমিউনিটি সেন্টার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

পটিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল ও পটিয়া পৌর অডিটরিয়াম, রিজবিয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা, বিবিরহাট আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চান্দগাঁও, বাঁশখালী বহুমুখি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজ’র বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।