ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ে অনুসমর্থন

ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়ের সুযোগ রেখে ভারতের সঙ্গে করা ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তিতে’ অনুসমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2013, 08:57 AM
Updated : 7 Oct 2013, 09:19 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের মন্ত্রিসভা আগেই এ চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়েছে। এখন এর অনুলিপি হস্তান্তর হলেই চুক্তি কার্যকর হবে।

দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সুশীল কুমার সিন্দে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় এই ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তিতে’ সই করেন।

এই চুক্তির  ফলে দুই দেশ এক বছরের বেশি মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বিনিময় করতে পারবে। তবে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা বন্দিদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। যে কেউ ছয় মাসের নোটিশে এ চুক্তি বাতিল করতে পারবে।

তবে কোনো দেশ বন্দি বিনিময়ের আবেদন করলে কতো দিনের মধ্যে তা সুরাহা করতে হবে- সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ নেই চুক্তিতে।

এই চুক্তির ফলে আসামের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পথ তৈরি হলো।

এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি অনুপ চেটিয়া সম্প্রতি এর আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও মত বদলে সম্প্রতি ভারতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই তাকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।

১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ, বিদেশি মুদ্রা রাখা এবং স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলায় তাকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সেই সাজার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি।

বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় এতোদিন তাকে ফেরত পায়নি ভারত।

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশও সুব্রত বাইন ও সাজ্জাদ হোসেনের মতো পলাতক সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে আনার সুযোগ পাবে।

২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এদের মধ্যে ঢাকার অপরাধ জগতের তখনকার প্রভাবশালী সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান সুব্র্রত বাইনও ছিলেন।

কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স সেখানকার কারাইয়া থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত। গত বছরের শেষ দিকে তাকে আবারো গ্রেপ্তার করে কলকাতার পুলিশ।

সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯১ সালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাসী জীবনের উত্থান হয়।

সুব্রত বাইন কলকাতায় এবং সাজ্জাদ তিহার কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে বন্দি বিনিময়ে ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তির’ আওতায় এই তিন জনের হস্তান্তর প্রক্রিয়াই হবে প্রথম ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই চুক্তি অনুমোদন

সন্ত্রাস দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে  দুটি চুক্তি করার প্রস্তাবও সোমবার অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ-ইউনাইটেড স্টেটস কাউন্টার টেরোরিজম কোঅপারেশন ইনিশিয়েটিভ’ চুক্তি হলে সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের পথ তৈরি হবে। এছাড়া জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

আর ‘মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন বিটুইন মিনিস্ট্রি অব হোম অ্যাফেয়ার্স অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ইউনাইটেড স্টেটস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর মিউচ্যুয়াল কো-অপারেশন ইন দ্য স্ফিয়ার অব ড্রাগ কন্ট্রোল’ চুক্তি হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ তৈরি হবে। 

সচিব বলেন, “পারস্পরিক সম্মতিক্রমে এই চুক্তি হবে। এতে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না।”