হরতালে যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ, নিহত ১

জামায়াতে ইসলামীর হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2013, 02:56 AM
Updated : 14 August 2013, 04:47 PM

সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ আরো কয়েকজন।

নিহত খলিলুর রহমান মল্লিক (২০)ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি। তিনি টিকাটুলির বাংলাদেশ ইসলামীক ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী স্টাডিজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে দনিয়া একে হাই স্কুলের কাছে হরতালের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শুরু হয় সংঘর্ষ। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়ে।

“ধাওয়া খেয়ে শিবিরকর্মীরা চলে যাওয়ার পর এক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

পুলিশ পরে তার পরিচয় জানতে পারে জানিয়ে মিনহাজ বলেন, “ঘটনার সময় কয়েকটি যানবাহন ওই রাস্তা দিয়ে দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারই কোনো একটি ওই যুবককে ধাক্কা দিয়ে যেতে পারে।”

মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল সোয়া ৭টার দিকে পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে আনে। তবে সে আগেই মারা যায়।

“নিহত যুবকের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেটের জখমের চিহ্নও দেখা গেছে।”

চিকিৎসকও বলেন, কোনো যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই খলিল মাথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন।

বাংলাভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিয়া খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলে শিবির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ওই যুবককে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

সংঘর্ষের সময় পুলিশের রাবার বুলেটে বাংলাভিশনের ক্যামেরা পারসন জহুরুল হক জনিসহ আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জিয়া খান জানান।

নিহত খলিলের বোন শিউলি আক্তার হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ায়। বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে খলিল ছিল দ্বিতীয়।

খলিল শিবিরের সঙ্গে ‘জড়িত ছিল’ জানিয়ে শিউলি বলেন, তার ভাই জুরাইন এলাকায় একটি মেসে থাকত।

এদিকে সকাল ৮টার দিকে আদাবরে একটি বাস ও ট্রাকে আগুন দেয়ার চেষ্টার সময় এক যুবককে আটক করে পুলিশ।

আদাবরের ওসি শামীমুর রশিদ বলেন, ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এছাড়া সকালে পুরান ঢাকার ধূপখোলায় হরতালের সমর্থনে মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।

গত ১ অগাস্ট এক রিট আবেদনের রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় ৪৮ ঘণ্টার এই হরতাল ডাকে দলটি।

হরতালের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন, আটক করা হয় শতাধিক কর্মীকে।

মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের ধাওয়ায় জিপ উল্টে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো সাতজন।   

হরতালের প্রথম দিন রাজধানীতেও বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে হাতবোমা ফাটায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টার অভিযোগে দুজনকে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঈদের ছুটির পরপরই এ হরতালে জামায়াত-শিবির কর্মীরা যাতে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা ঘটাতে না পারে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মঙ্গলবার ভোর থেকেই রাজধানীর প্রতিটি সড়ক অবস্থান নেয়। বুধবারও তাদের সর্থক অবস্থায় দেখা যায়। 

রাজধানীতে হরতালের মধ্যেও রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। বিভিন্ন সড়কে আগের দিনের তুলনায় বেশি গণ পরিবহন চলতে দেখা গেছে।

হরতালের কারণে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।