সরকারের সমালোচনায় ইমরান

বিরোধী দল এবং তাদের পক্ষের সংবাদ মাধ্যমের কাছে ‘সরকারি লোক’ হিসেবে চিহ্নিত ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2013, 10:34 AM
Updated : 26 March 2013, 10:34 AM

মঙ্গলবার শাহবাগের সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেছেন, সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।

জামায়াত নিষিদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ইমরান সরকারের প্রতি এই কথা বলেন।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, “নতুন প্রজন্মের ছয় দফা দাবিকে, গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করার যে স্পর্ধা সরকার দেখিয়েছে, তা নজিরবিহীন।”

গত ২১ ফেব্রুয়ারির সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চ জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।

ওই সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২৬ মার্চের সমাবেশ হয়, যাতে সরকারের সমালোচনা করেন ইমরান।

ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ন ইমরান শুরু থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন।

পেশায় চিকিৎসক ইমরান দাবি করে আসছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।

তবে গণজাগরণবিরোধীদের অভিযোগ, এক সময়ের রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ইমরান বর্তমানে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের সদস্য।

ইমরান বলেন, “২৬ মার্চের আগেই সংশোধিত আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী সন্ত্রাসী শক্তি জামায়াতে ইসলামী বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ।

“কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্টিমেটামের সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের টনক নড়েনি।”

ইমরান বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ১৯৯৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ থাকলেও সরকার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

“আইনের স্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা সত্বেও সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। গণজাগরণ মঞ্চের এই দাবিকে বারবার পাশ কাটিয়ে সরকার কি প্রকারান্তরে গণমানুষের প্রাণের দাবিকেই উপেক্ষা করছে না?”

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে সম্প্রতি হাই কোর্টের কার্যতালিকায় আগের একটি রিটের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “… এই রিটের মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন যদি বাতিলও হয়, তবুও এই দেশবিরোধী দলটি রাজনৈতিক দল হিসাবে অপকর্ম চালিয়ে যাবে।”

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এবং ব্লগারদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য জড়িয়ে ধর্মীয় উস্কানিদাতা গণমাধ্যম ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ারও সমালোচনা করেন ইমরান।

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের একটি গণমাধ্যমের ধর্মীয় উস্কানিদাতা সম্পাদককে গ্রেপ্তারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হলেও সরকার কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।

“ব্লগের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে অবমাননাকর বিষয়গুলো যে গণমাধ্যম হীন উদ্দেশ্যে ছাড়ালো সেই গণমাধ্যমের বিষয়ে সরকার নিশ্চুপ।”

“অথচ আমরা দেখলাম বাংলা ব্লগগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকারই নামান্তর।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রতি গণজাগরণ মঞ্চ শতভাগ শ্রদ্ধাশীল আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ইমরান বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, আপনিও আমাদের চেতনার জায়গাটি বুঝবেন।”

“আপনার কাছে গণজাগরণ মঞ্চের সবিনয় নিবেদন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের যে দৃঢ় দাবি তারুণ্যের হৃদয়ে শিখা অনির্বাণের মতো জ্বলছে আপনি তাকে এড়িয়ে যাবেন না।”