একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্দশ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।
শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশ থেকে বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ মিরাজের লাশ উদ্ধার করে রেল পুলিশ।
লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, মিরাজের দুই ঠোঁটের ভেতরে, মাথার পেছনে এবং বুকের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। তার নাক ছিল ভাঙা। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার সকালে মিরাজের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য মগবাজারে বুলবুলের বাসায় রাখা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, “দেশের যা অবস্থা, তাতে দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে মহাযুদ্ধ প্রয়োজন।”
মিজানকে কারা হত্যা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এটা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে গোলাম আযমের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়ায় যে এটা ঘটেছে- তা সারা দেশের মানুষ বলবে।”
এই মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, “সাত মাস হলো সাক্ষ্য দিয়েছি। কিন্তু সাক্ষীর নিরাপত্তা সরকার তেমন জোরদার করেনি। সাক্ষ্য দেয়ার পর বাসায় এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে আছি।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে বুলবুল বলেন, “দেশে যেভাবে চোরাগুপ্তা মামলা হচ্ছে। তাতে দেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ‘মহাযুদ্ধের’ প্রয়োজন।”
মিরাজের বোন রোকসানা তানজিম মুকুল বলেন, শনিবার সকাল ১০টার পর নীল রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট, জুতা ও সানগ্লাস পড়ে বাসা থেকে বের হন মিরাজ।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মিরাজ বোনকে বলেছিলেন, বসুন্ধরা সিটিতে ‘মুভি’ দেখতে যাচ্ছেন। সেখানেই দুপুরে খেয়ে পরে রবীন্দ্র সরোবরে যাবেন।
মুকুল জানান, পল্লবীর আরিফাবাদে ‘সেলিনা নিবাসের’ পঞ্চম তলায় থাকতেন তারা দুই ভাইবোন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মারা যাওয়ার আগে তাদের মা ইফা আরাও ওই বাসাতেই ছিলেন।
মিরাজ কী করতেন জানতে চাইলে তার বড় বোন বলেন, “বিমানবন্দরে বন্ধুদের সঙ্গে সি এন্ড এফ এজেন্সির ব্যবসা করত। আবার গাড়ি কেনাবেচার ব্যবসাও করতো মাঝেমধ্যে। কোনো ব্যবসাই পাকাপোক্তভাবে করত না।”
কোনো হুমকি এসেছিল কি না- জানতে চাইলে মুকুল বলেন, তেমন কিছু কখনো তাকে বলেননি মিরাজ।
মগবাজারে বুলবুলের বাসায় উপস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত কমকর্তা এম সানাউল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সরকারের।
সারা দেশের সব সাক্ষীরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে ‘ছায়া নিরাপত্তা’ দেয়া হচ্ছে। তিনি চাইলে প্রকাশ্যেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্দশ সাক্ষী হিসেবে বুলবুল আদালতে ১৯৭১ সালে ঈদ-উল-ফিতরের দিন সন্ধ্যায় পুলিশ কর্মকর্তা ছিরু মিয়া ও তার ছেলের সঙ্গে কথোপকথনের বর্ণনা দেন।
সাক্ষ্যে তিনি বলেছিলেন, সেদিন পাকিস্তানি সেনারা ছিরু মিয়া ও তার ছেলেসহ ৩৯ জনকে কারাগারের বাইরে নিয়ে যায়। তারপর তাদের গুলি করা হয়।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধে মামলার আরেক সাক্ষী ওয়াহিদুল আলম জুনুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এক নারী চট্টগ্রাম মেডিকেলে জুনুর লাশ রেখে পালিয়ে যায়। জুনু ছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার ১৯তম সাক্ষী।