লোড শেডিং কোথায় কখন, প্রস্তুত হচ্ছে সূচি

জ্বালানি সঙ্কটে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে আনতে লোড শেডিংয়ের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা অনুসারে কখন কখন বিদ্যুৎ থাকবে না, সেই সূচি চূড়ান্ত করছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2022, 01:07 PM
Updated : 18 July 2022, 01:07 PM

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে পরিকল্পিত লোডশেডিং ব্যবস্থাপনার জন্য আগে থেকেই গ্রাহকদের জানিয়ে দেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

সোমবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী এবং প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই ঘোষণা দেন।

এরপর যোগাযোগ করা হলে ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার যেসব এলাকায় লোড শেডিং হতে পারে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করছেন তারা।

সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময়ে তা ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

সোমবার ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে লোড শেডিংয়ের তথ্য জানানোর একটি ট্যাব চালু থাকতে দেখা যায়। তবে সেখানে কোথাও লোডশেডিং নেই বলেই উল্লেখ করা ছিল।

ডিপিডিসি এধরনের উদ্যোগ নিলেও অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো তেমন প্রস্তুতি দেখা যায়নি।

পিডিবির জনসংযোগ শাখার পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারাও একটি তালিকা প্রস্তুতের চেষ্টা করছেন। সোমবার না হলেও মঙ্গলবার কোনো এক সময়ে সেটা পিডিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তালিকা প্রকাশের পরিবর্তে মাইকিং, লিফলেট বিতরণের দিকে বেশি জোর দিচ্ছে।

সমিতির সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ডিমান্ড পর্যায়ে ও সরবরাহ পর্যায়ে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ফিডারগুলোর কাছে লোডশেডিংয়ের একটি তালিকা পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি সমিতিগুলো অঞ্চলভিত্তিক মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।”

শিল্প ও কলকারাখানার গ্রাহকদের মধ্যে লোড শেডিং না দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

ঢাকার আরেক বিতরণ সংস্থা ডেসকোর লোডশেডিং প্রস্তুতি জানার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকা মোবাইল নম্বরে কল করার চেষ্টা কলেও তা সম্ভব হয়নি।

দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্রাহক সেবা নম্বরে ফোন করা হলে সেখান থেকে লোড শেডিং সূচি তৈরির কোনো তথ্য নেই বলে জানান হয়।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

একইভাবে উত্তরাঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দেশে এখন উৎপাদিত ১২০০০ মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ১২০০০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭০০০ বিদ্যুৎ খরচ হয় বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিভূক্ত এলাকাগুলোতে। বাকি বিদ্যুৎ খরচ হয় ডেসকো, ডিপিডিসি, ওজোপাডিকো ও নেসকোর আওতাভুক্ত এলাকায়।

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল আমদানি করা বাংলাদেশের পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ তেল নির্ভর।

ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় এলএনজি কেনার পরিমাণও কমানো হয়েছে। তাতে দেশজুড়ে লোড শেডিং ফিরে এসেছে আবার।

এই অবস্থায় সোমবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ডিজেলের দাম ‘আকাশচুম্বি’ হয়ে যাওয়ায় আপাতত দেশে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রাখা হবে। পাশাপাশি পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে সপ্তাহে একদিন।