রমিজ উদ্দিন কলেজের সেই সড়কের আন্ডারপাস খুলল

বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন বছর আগে যেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে পথচারীদের জন্য খুলল আন্ডারপাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 08:05 AM
Updated : 12 Jan 2022, 11:21 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় আন্ডারপাসটির উদ্বোধন করেন।

ওই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মিমের প্রাণ হারানোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনার পরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এখানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। আজকে সেই আন্ডারপাস আমরা উদ্বোধন করতে পারছি।”

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনের সড়কে বাসচাপায় এই দুই শিক্ষার্থী মারা গেলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে বছর ১২ অগাস্ট কলেজ প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বলেন, “এখান থেকে হাজার হাজার পথচারী চলাচল করে, শিক্ষার্থীরা চলাচল করে এবং এই রাস্তাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যথেষ্ট চওড়া রাস্তা। যে কারণে এটা অত্যন্ত প্রয়োজন।

“আমি মনে করি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে এই আন্ডারপাসটা বিশাল ভূমিকা রাখবে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই আন্ডারপাস নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছিল পরে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, “এই আন্ডারপাসে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও বয়স্ক মানুষের কথা বিবেচনায় এনে লিফটের ব্যবস্থা করা আছে, র‌্যাম্প করা আছে এবং চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

“এই আন্ডারপাস নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী ও পথচারীর সড়ক পারাপার নিরাপদ হবে অন্যদিকে এয়ারপোর্ট মহাসড়কের এই অংশে যানজটমুক্ত থাকবে।”

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত আন্ডারপাসটি রাস্তা চালু রেখে ‘অত্যন্ত কষ্ট’ করে তৈরি করতে হয়েছে জানিয়ে এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই আন্ডারপাসটা, এই বক্সপুশিং আন্ডারপাস নির্মাণ এটা আমাদের কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে এটা সম্পন্ন করে আমি মনে করি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

“যদিও বক্সপুশিং পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল কিন্তু আমি মনে করি যে সম্পূর্ণ সড়কে চলাচল ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে এই বক্সপুশিং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল।”

মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে কথা মাথা রেখে ভবিষ্যতেও দেশের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজগুলো সেরে ফেলা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। 

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এদিন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দুটি সড়ক এবং একটি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এগুলো হচ্ছে সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগসড়ক; রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর চেঙ্গী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু।

এসব নির্মাণে সেনাবাহিনীর ২৫ ইসিবি, ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড, ২০ ইসিবি, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, ১৬ ইসিবিসহ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪-লেন মহাসড়কের ফলে সিলেট বাইপাস থেকে কানাইঘাট এবং শাহপরাণ সেতু ঘাট থেকে সিলেট শহর বাইপাস পর্যন্ত যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

“এই সড়কটি স্থানীয় স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজতর ও নিরাপদ করবে। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের বাণিজ্যিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও এই প্রকল্পটি ব্যাপক অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

রাঙ্গামাটিতে চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধনে তিনি বলেন, “নানিয়ারচরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণের ফলে শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগোলো।

“এতে করে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে ভূমিকা রাখবে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করেছিলাম। এখনও শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।”

চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২ মিটার। সংযোগ সড়কসহ সেতুটির নির্মাণে  খরচ হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা।

বান্দরবানের সীমান্ত সড়ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যবসা বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং আয় বৃদ্ধিতে এই সড়ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

“দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি এরই অংশ হিসেবে আমরা কক্সবাজারের বালুখালী হতে বান্দরবানের ঘুনধুম সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

“এ সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বিধায় আন্তর্জাতিক এ সড়কটি অন্যান্য সড়ক ও মহাসড়ক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।”

সড়কটি সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। 

কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সংযোগ সড়কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নানিয়ারচর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফিন, নানিয়ারচরের ইউএনও শিউলি রহমান তিন্নী।

এছাড়া ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দীন পথচারী আন্ডারপাস,সিলেট সেনানিবাস থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন