পানিতে ডুবে মৃত্যু বেড়েছে ৬৭%

আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ৬৭ শতাংশ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2022, 04:32 PM
Updated : 5 Jan 2022, 04:32 PM

বলা হচ্ছে, গেল বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে মোট ১ হাজার ৩৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের ৮৩ শতাংশই শিশু।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য তুলে এনেছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘সমষ্টি’।

বুধবার কারওয়ান বাজারে ‘পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু সংবাদ মাধ্যমে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সমীক্ষার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে যেখানে এ ধরনের ঘটনায় ৮০৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়ে ১ হাজার ৩৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এ দুই বছরে ১৮ বা তার কম বয়সী ১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। পরের অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে নেত্রকোণা জেলায়। এরপরের অবস্থানে আছে নোয়াখালী ও কুমিল্লা। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে শরীয়তপুরে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গেল দুই বছর পানিতে ডুবে মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটে অগাস্ট মাসে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ১০ ভাগের এক ভাগ ঘটেছে নৌ দুর্ঘটনায়।

পারিবারিক অসতর্কতা বা শিশুদের প্রতি নজরদারি না থাকার কারণেই অধিকাংশ মৃত্যু হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা বেশি।

২০২১ সালের মার্চের শুরু থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় সমীক্ষা চালিয়ে জিএইচএআই ও সমষ্টি দেখেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৪৭ শতাংশ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এই সময়ে চাঁদপুর, কুমিল্লা, পটুয়াখালীর কয়েকটি এলাকায় ৫১ জন পানিতে ডুবে মারা গেলেও গণমাধ্যমে এসেছে ২৪টি ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনে (আইএইচএমই) প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি শীর্ষক এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনা সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এ দিক দিয়ে কমনওয়েল্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।

এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সংগঠনের তৎপরতায় সরকার পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছে, যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে আলোচনা সভায় জানানো হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নানা ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।

“তবে সেখানে প্রতিরোধমূলক আইন আছে, অ্যাড্রেস করার মত, দেখার মত… সন্তোষজনক না হলে একটা অবস্থা আছে; যেটা আমাদের এখানে গাফিলতি বা ল্যাকিং বা অনুপস্থিত অনেক বেশি”

মন্ত্রী এম এ মান্নান পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সকলকে সম্মালিতভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, সব পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে মৃত্যু সংখ্যা কমে আসবে।

জিএইচএআই ও সমষ্টি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড রুহুল কুদ্দুস, সমষ্টির পরিচালক রেজাউল হক এবং মীর মাশরুর জামান বক্তব্য দেন।