সমালোচনার মুখে সেই স্কুলে ভর্তিতে দাঁতের শর্ত প্রত্যাহার হচ্ছে

ভর্তি হতে হলে সব দুধ দাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে- এমন একটি শর্ত দিয়ে সমালোচনার মুখে তা বাতিলের কথা জানাল ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 05:27 PM
Updated : 28 Oct 2021, 05:27 PM

প্লে গ্রুপে ভর্তির ক্ষেত্রে নানা শর্তের সঙ্গে এই শর্তটিও দিয়েছিল এই স্কুলটি; যা নিয়ে ফেইসবুকে ওঠে কড়া সমালোচনা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু এটা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাই সামনে এটা আমরা প্রত্যহার করে নেব।”

তবে তিনি বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই শর্তগুলো দেওয়া হচ্ছে।

“কখনোই এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এখন যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, তাই আমরা এটা সামনে থেকে প্রত্যাহার করে নেব।”

প্রতিষ্ঠানটিতে এখন ২০২২ সালের প্লে গ্রুপে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। এই ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুদের শারীরিক যোগ্যতার কিছু শর্ত দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

শর্ত অনুযায়ী, শিশুদের উচ্চতা হতে হবে তিন ফুট থেকে তিন ফুট আট ইঞ্চির মধ্যে। ওজন থাকতে হবে ১৩ থেকে ২১ কেজির মধ্যে।

এছাড়া শিক্ষার্থীর সকল দুধ দাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। ছোঁয়াচে অসুখ থাকা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লটারিতে উত্তীর্ণ হলেও কোনো শিশু এসব যোগ্যতা পূরণ না করলে ভর্তিতে অযোগ্য হবে।

এই বিজ্ঞপ্তি দেখে শিশুদের শারীরিক ‘সক্ষমতার’ বিষয়ে শর্ত আরোপ করাকে বৈষম্যমূলক দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সরব হন অনেকে।

আইনজীবী দিলরুবা শারমিন একে ‘ভায়োলেশন অব কনস্টিটিউশন’, ‘ভায়োলেশন অব হিউম্যান রাইটস’, ‘ভায়োলেশন অব চাইল্ড রাইটস’ বলছেন।

ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, “একটা সভ্য(?) দেশে, আধুনিক যুগে, একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসলে শিক্ষার্থীদেরকে কী শেখাতে চায়?”

আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি নামের আরেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এদের তত্ত্বাবধানে আপনার সন্তান আর যাই হোক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে না, ভেতরে মূল্যবোধ জন্মাবে না, এটা নিশ্চিত থাকেন।”

জাহিদ কবির টিটু লিখেছেন, “একেবারে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি না। তাই বলে বৈষম্যের একটা সীমা থাকবে না? এই কাজে সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটা দেশের সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন। রাষ্ট্র থেকে কেউ বেশী শক্তিশালী নয়৷ এই স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

“আশা করি, দেশের শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে। আর যদি কারো সন্তান এই বৈষম্যমূলক মানদন্ডের কারনে ভর্তি হতে না পারে, তাদের উচিত মামলা করা।”

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক রেজা ঘটক লিখেছেন, “সরকারের শিক্ষা নীতিতে কী কোথাও শিশু শিক্ষার্থীর বয়স, উচ্চতা, ওজন, দুধ দাঁত, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা-সংক্রান্ত কোনো শর্ত আছে? যদি না থাকে তাহলে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কীসের ভিত্তিতে এ ধরনের শর্ত যুক্ত করার সুযোগ পায়। সরকার বাহাদুরের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি!”

ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ বলে এড়িয়ে গেলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোল্লা মোস্তাহিদুর জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকারি স্কুলের বাইরে হলে তো সুযোগ নেই।”

তবে তিনি জানান, শিশুদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের শর্ত আরোপের ‘সুযোগ নেই’।