কারও কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা: প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কোনো সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে তার মনে হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 11:58 AM
Updated : 4 Oct 2021, 02:16 PM

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মনে হয় রিফিউজি পালতে পারলে, এই পালাটাই একটা ব্যবসা কারও কারও জন্য। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিটাই থাকবে না। এটা হল আসল কথা।”

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সঙ্কট এবার পঞ্চম বছরে গড়িয়েছে, কিন্তু নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর একজনকেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

এ বিষয়টি তুলে ধরে এবার জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি। মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।”

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ নেই।

“রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের বোধ হয় একটু লাভই হয়।… অনেক প্রস্তাব আমরা পাই, যে রোহিঙ্গারা এখানে আছে, তাদের জন্য এটা করা হোক, ওটা করা হোক। সাথে সাথে আমরা বলি যে ঠিক আছে, কাজগুলি আপনারা করেন, মিয়ানমারে করেন। করে এদেরকে নিয়ে যান। আমার এখানে করার তো দরকার নেই। আমার এখানে যেটুক করার আমরা করেছি।”

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর বাংলাদেশ সরকারই যে শুরুতে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় এইসব নিপীড়িত মানুষের জরুরি চাহিদাগুলো মিটিয়েছে, সেকথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা ওরকম দাবি করে, আমি সোজা বলে দিই, যান মিযানমারে, ওখানে ঘর করেন, ইশকুল করেন, ওখানে হাসপাতাল করেন, তাদের থাকার জায়গা করেন, আমার এখানে করা লাগবে না।…

“যেটা আমার একটা ধারণা, যে সব কিছুতেই যেন একটা ব্যবসা।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংস্থা আছে, যারা আন্তরিক, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে ভালো সাড়া দেয়। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আগ্রহ দেখায় না।

১১ লাখ রোহিঙ্গার এই চাপে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষত হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি কাজ চলছে, কিছু সন্ত্রাসী কাজ, নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগ… এই ড্রাগ পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে এরা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক।

“সেটা আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এই এই সমস্যা হচ্ছে, এবং আরও হবে, যদি এদেরকে ফেরত না দেওয়া হয়। আমরা বলে যাচ্ছি, সাড়াও পাচ্ছি, কিন্তু খুব বেশি কার্যকর কিছু দেখা যাচ্ছে না।”