সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব তলব ‘ভয় দেখানোর কৌশল’

ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের চিঠি দেওয়াকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ মনে করেছে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2021, 09:33 AM
Updated : 18 Sept 2021, 03:01 PM

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই পদক্ষেপ সাংবাদিকদের মনে ‘ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল’। বিএফইউজে, ডিইউজে, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

রোববার দুপরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে চিঠি দেয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এই ১১ জনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

তিনি বলেন, “দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কেননা এর আগে কোনো দিন কোনো সময়ে এরকম ঘটনা ঘটেনি।

“কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনসমূহের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি।”

এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দাবি করে তিনি বলেন, “বিএফআইইউর দেওয়া চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সমাজের মানুষের কাছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তথা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।”

একইসঙ্গে বলা হয়, “আমাদের নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাবে যদি কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন কিংবা কোনো ধরনের মানি লন্ডারিং কিংবা জঙ্গি অর্থায়নের তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়, তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর যদি তা না হয়, তবে সেটাও যেন যথাযথ গুরুত্বের সাথে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “ব্যাংক হিসাব তলবের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। যদি কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন থাকে কিংবা জঙ্গি অর্থায়নে সহায়তা সন্দেহ করা হয়, তখনই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়। কিন্তু আমাদের তো এরকম কোনো অভিযোগের কারণ নেই।

“আমি তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।”

বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, “চিঠি দেওয়ার পর তথ্য পাওয়ার আগেই ব্যাংক হিসাব তলবের খবর গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতেই এই কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছে।

“আমরা মনে করি এটি নিশ্চয়ই উদ্দেশ্যমূলক। এটি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি বলে মনে করি আমরা।”